Image description

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাবে স্থানীয় কৃষক ও খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গবাদিপশুর হঠাৎ অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরীক্ষায় গরু ও ছাগলের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে, যা মানুষের মধ্যেও সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করছে।

কী ঘটছে মুরাদনগরে?

উপজেলার বাঙ্গরা বাজার, নবীপুর ও টনকী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গরু ও ছাগলের মধ্যে অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত পশুগুলো হঠাৎ খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেয়, শরীরে ফোলা দেখা দেয় এবং দ্রুত মৃত্যু ঘটে। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ নমুনা পরীক্ষার পর এটিকে অ্যানথ্রাক্স হিসেবে শনাক্ত করেছে।

কৃত্রিম প্রজনন সুপারভাইজার মোঃ রুহুল আমিন জানান, “গত বছরও অ্যানথ্রাক্সে মুরাদনগরে সহস্রাধিক গরু মারা গিয়েছিল, যার ফলে অনেক খামারি পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এ বছরও রোগটি আবার দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত পশুর শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়, পেট ফুলে যায়, মুখ দিয়ে লালা এবং মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হয়। লক্ষণ আগে থেকে বোঝা কঠিন হওয়ায় সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।”

প্রাণিসম্পদ বিভাগের পদক্ষেপ

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী জানান, “আক্রান্ত পশুদের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে এবং অ্যানথ্রাক্স পজিটিভ পাওয়া গেছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা দ্রুত ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করেছি।” তিনি আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে আক্রান্ত এলাকায় গরু ও ছাগলকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে।

মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি

অ্যানথ্রাক্স শুধু পশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আক্রান্ত পশুর মাংস বা রক্তের সংস্পর্শে এলে মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে। এ কারণে স্থানীয় প্রশাসন মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান বলেন, “আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করছি। কোনো গবাদিপশু হঠাৎ মারা গেলে তা দাফনের আগে প্রাণিসম্পদ অফিসে জানানো বাধ্যতামূলক।”

প্রতিরোধে কী করা হচ্ছে?

প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করছে। জরুরি ভিত্তিতে টিকাদান কার্যক্রম চলছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে সম্ভাব্য মানব সংক্রমণ মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শ এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষকদের উদ্বেগ

অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাবে স্থানীয় খামারিরা চরম উদ্বেগে রয়েছেন। গত বছরের মতো এবারও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। স্থানীয় কৃষক মোঃ আবুল হোসেন বলেন, “আমাদের জীবিকা এই গবাদিপশুর ওপর নির্ভর করে। হঠাৎ এই রোগে পশু মারা গেলে আমরা পথে বসব। সরকারের কাছে দ্রুত প্রতিকার চাই।”

সরকারি পদক্ষেপ জরুরি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। টিকাদানের পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং আক্রান্ত পশুগুলোর সঠিকভাবে দাফন নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সংকট মোকাবেলা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মুরাদনগরে অ্যানথ্রাক্সের এই প্রাদুর্ভাব কৃষক ও খামারিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ ও সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।