
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা চত্বরে গড়ে উঠেছে এক অনন্য উদাহরণ ‘পাখি কলোনি’। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাখিদের জন্য গাছে গাছে বাঁধা হচ্ছে মাটির হাড়ি, আর শানবাঁধানো পুকুরে বসানো হয়েছে আড়ানী। উদ্দেশ্য—প্রকৃতির পরম সহচর এসব পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের নিশ্চয়তা তৈরি করা।
শরতের হিমেল হাওয়া ও নরম আলোয় এখন উপজেলা চত্বরে ভেসে আসে পাখির কূজন। দীর্ঘদিন পর যেন ফিরে পেয়েছে প্রকৃতির নিজস্ব ছন্দ, প্রাণ ফিরে পেয়েছে পরিবেশের হৃদস্পন্দন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আল জিনাত বলেন, “পাখি প্রকৃতির প্রাণ, আর প্রকৃতি মানেই জীবন। আমরা এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে মানুষ, গাছ ও পাখি একসঙ্গে টিকে থাকবে। ক্ষেতলাল উপজেলা চত্বরে এই উদ্যোগ শুধু পাখিদের আশ্রয় নয়, এটি প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রতীক।”
তিনি আরও বলেন, “পাখির কূজনের মধ্যেই আমরা প্রকৃতির হাসি শুনতে চাই—একটি মানবিক, প্রাণবন্ত ও সবুজ পৃথিবীর প্রত্যাশায়।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, “পাখি কৃষির নীরব সহযোগী। তারা মাঠের ক্ষতিকর পোকার শত্রু। এই উদ্যোগ কেবল পরিবেশ নয়, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষাতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জনাব পলাশ চন্দ্র বলেন, “পাখি পরিবেশের এক অদৃশ্য রক্ষাকবচ। ক্ষেতলালের এই উদ্যোগ আমাদের প্রকৃতি সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় এক আলোকিত অধ্যায় যুক্ত করবে।”
সহানুভূতির আরেক নাম ‘পাখি কলোনি’ স্থানীয় পরিবেশ কর্মী এম রাসেল আহমেদ বলেন, “যেখানে মানুষ পাখি তাড়ায়, সেখানে তাদের জন্য ঘর বানানো হচ্ছে—এটি শুধু পরিবেশ প্রকল্প নয়, এটি সহানুভূতির প্রতীক। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে, আর প্রকৃতি বাঁচলেই মানুষ টিকে থাকবে।”
এখন ক্ষেতলাল উপজেলা চত্বরে মাটির হাড়িতে বাসা বাঁধবে শালিক, দোয়েল, বাবুই টুনটুনিসহ নানা প্রজাতির দেশীয় পাখি। পুকুরের নিস্তরঙ্গ জলে ভাসছে আড়ানী, ঝিকমিক করছে রোদে মাছের খেলা। আর সেই জলরাশির মাঝে আড়ানীতে লেখা কবিতার সুরে পাখিদের মাছ খাওয়ার দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
এসো হে পাখি, খাও রে মাছ,
পুকুর জলে দিচ্ছি আজ।
রোদে ঝিলমিল জলের হাসি,
নেচে চলে রুপালি রাশি।
চরো রে তীরে, ভিজাও ডানা,
গাও রে গান হাওয়ার তানায়।
তোমার গানে জেগে ওঠে গ্রাম,
প্রাণে লাগে আনন্দ ধাম।
ক্ষেতলাল উপজেলা প্রশাসনের এই ‘পাখি কলোনি’ এখন কেবল একটি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নয়—এটি প্রকৃতি, মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের সহাবস্থানের এক জীবন্ত দলিল। পাখির কূজনেই যেন ফিরে আসছে প্রকৃতির হারানো হাসি।
Comments