Image description

অবহেলিত জেলার আরেক নাম সাতক্ষীরা। এ জেলার অধিকাংশ সড়ক ভাঙাচোরা, কাঁচা ও খানাখন্দকে ভরা। দেশের অন্যান্য জেলা থেকে উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে সাতক্ষীরা। প্রতিষ্ঠার ৪১ বছরেও এককভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হয়নি এ জেলায়। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাতক্ষীরা জেলাবাসীর।

ভোমরা স্থলবন্দর, সুন্দরবনের মধু, আম, কুল-বরই, চিংড়িসহ বিভিন্ন খাত থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব আসলেও জেলার উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ হতাশাজনক।
এলজিইডি, সাতক্ষীরা জেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৫ হাজার ৭শ’ ৮৮টি সড়ক রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১১ হাজার দুই কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮ হাজার ৭শ’ ৭২ কিলোমিটার সড়কই কাঁচা। আয়তনে সাতক্ষীরা দেশের ২৫তম বৃহত্তম জেলা।

এই জেলায় রয়েছে ভোমরা স্থলবন্দর, স্থলপথে সুন্দরবন, আম, মধু, চিংড়িসহ রাজস্ব আহরণের বিভিন্ন খাত। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকারি খাতে দিলেও প্রতিষ্ঠার ৪১ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত এই জেলা। নেই বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প কারখানা ও ট্রেন লাইন। জেলার অধিকাংশ সড়ক কাঁচা হওয়ায় নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলাবাসীকে।
কৃষি অর্থনীতির ভিত্তি হলো গ্রামীণ জনপদ। রাস্তা কাঁচা হওয়ায় ব্যাপক দুর্ভোগে জনসাধারণ। এছাড়া পাকা রাস্তাগুলোও সংস্কার না হওয়ায় বিপাকে তারা।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাড. আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, 'সাতক্ষীরা জেলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, স্থানীয় সংসদ সদস্য থাকেন বিরোধী দলের। এর ফলে উন্নয়ন হয় না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংসদ সদস্যরা সরকারি দলের হলেও উন্নয়ন কাজ সেভাবে হয়নি'।
জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নূর খান বাবুল বলেন, 'পাশের দুটি জেলা যশোর ও খুলনা। সেখানে কি নেই? অথচ আমরা বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকারকে দিলেও সাতক্ষীরায় চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রেন লাইন নির্মাণের কথা শুধু শুনে আসছি দীর্ঘদিন। আমরা দেখে যেতে পারব বলে মনে হয় না'।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের আরশাদ আলী বলেন, 'যে কোনো দুর্যোগ উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করে। দুর্যোগে এলাকার সড়ক বিধ্বস্ত হয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার হয় না। আমি মনে করি, দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে এখানে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এই জেলায় কোনো বড় বাজেট নেই। উপকূলীয় এলাকার লোকজনের বাঁচাতে এই অঞ্চলে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ ও সংস্কার জরুরি'।

তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের রবীন দাস বলেন, 'নগরঘাটা গ্রামের রাস্তাঘাট খুবই খারাপ। হাঁটুর ওপর জল ওঠে বর্ষাকালে। আমরা চলাচল করতে পারি না। নারী-শিশু ও বয়স্কদের চলাচল করতে মারাত্মক কষ্ট পেতে হয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পারমাছখোলা গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় রাস্তা সংস্কার জরুরি। কাঁচা রাস্তাগুলো দ্রুত পাকা করতে হবে।

মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, 'আমাদের এলাকার রাস্তাগুলো এত খারাপ যে, ধান-চাল কিছু আনা যায় না। গরু-ছাগল পর্যন্ত আনা যায় না। এই রাস্তার পাশে আমাদের ঘের রয়েছে। ঘেরে খাবার দিতে গেলে আমাদের মাথায় করে বয়ে আনতে হয়। এছাড়া ধান-চাল বহন করতেও খুব কষ্ট হয়'।

এদিকে, 'সাতক্ষীরা গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প' নামের একটি প্রকল্প পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে একনেক বৈঠকে। উন্নয়ন প্রকল্পটি পাস হলে জেলাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে। এমনটাই বলেছেন জেলার এলজিইডির কর্মকর্তারা।

এলজিইডি, সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী তারিকুল হাসান খান জানান, 'সাতক্ষীরা এলজিইডির অধীনে ১১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ২শ’ ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা। আমাদের শতকরা ৮০ ভাগ সড়ক কাঁচা। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে সাতক্ষীরার মানুষ উপকৃত হবে'।