কর্ণফুলীর সড়কে অবৈধ অটোরিকশার অবাধ বিচরণ, অসহায় ট্রাফিক পুলিশ!
দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক থেকে অলিগলি সবখানে এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং নাম্বার বিহীন অবৈধ অটোরিকশার দাপট। এগুলো রুখতে নাভিশ্বাস অবস্থা ট্রাফিক পুলিশের।
বাঁধা বা আটক করলেই তেড়ে আসছেন বাংলাদেশ সিএনজি অটোরিকশা হালকা যান শ্রমিক ফেডারেশন, ট্রেড ইউনিয়ন ও ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ একাধিক শ্রমিক সংগঠনের নেতা এবং চালকেরা। অনেক সময় জোট হয়ে ঘেরাও করছে পুলিশের ওপর। ফলে কোনোভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না এসবের অবাধ বিচরণ। এসব নাম্বার বিহীন অবৈধ অটোরিকশাসহ ব্যাটারিচালিত বাহনের সংখ্যা গত কয়েক দিনে হু হু করে বেড়েছে বলে জানিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।
ট্রাফিক আইন অমান্য করে সড়কে বেপোরায়া গতিতে ছুঁটেচলা এসব যানবাহন ট্রাফিক পুলিশ আটক করলে উল্টো তাদের দোষারোপ করেন বলে জানান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যেরা। এতে পুলিশও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে। তাদের কারণে বিকেল গড়াতেই যানজটের মাত্রাও যায় বেড়ে কয়েক গুন। একই দৃশ্য দেখা গেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর মইজ্জ্যেরটেক চত্বরে। চালকরা কোনো আইনের তোয়াক্কা করছেন না। উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার দ্রুত গতিতে যান চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মইজ্জ্যেরটেক এলাকায় টোকেন বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে একটি চক্রটি কৌশলে এসব অবৈধ যান চলাচলের জন্য বাঁধা করাচ্ছেন। চালকদের দিয়েছেন এসব সংগঠনের ছবিযুক্ত আইডি কার্ডও। ট্রাফিক পুলিশকে এসব আইডি কার্ড দেখিয়ে বাধ্য করছেন গাড়িগুলোকে আটকানো বা মামলা না দিতে। এতে করে সড়কে বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা।
জানা যায়, কর্ণফুলীর মইজ্জ্যেরটেক থেকে আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী এলাকায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা পরিচয়ে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব আইডি কার্ডের মাধ্যমে মাসিক মাসোহারায় হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিমাসে লাখ-লাখ টাকা।
ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, আগে বিভিন্ন সংগঠনের রশিদ বইয়ের মাধ্যমে চলত; টোকেন বানিজ্য। যে গুলোর মেয়াদ থাকত ১ মাসের। এখন টোকেনের আদলে ভূঁইফোড় শ্রমিক সংগঠন নামে চালকদের দিচ্ছে আইডি কার্ড। পুলিশ যখন নাম্বার বিহীন কোনো গাড়ি আটক করে। তখন তারা ওইসব আইডি কার্ড দেখিয়ে তাদের সেসব সংগঠনের সদস্য বা নেতা পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে এবং গাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য করে পুলিশকে। পুলিশ যখন আটক বা মামলা দেয়, তখন ভূঁইফোড় সংগঠনের নেতারা মুঠোফোনে বা নিজে এসে সড়ক বন্ধসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেয়। এক প্রকার যেন সড়কে অবৈধ অটোরিকশা রুখতে গিয়ে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ।
চাতরীর সিএনজি অটোরিকশা চালক আবু সোলতান টিপু, মইজ্জ্যেরটেকের হাবিবুর রহমান, বাঁশখালীর আরিফুল ইসলাম, চন্দনাইশের মোহাম্মদ আলীসহ একাধিক চালকরা অভিযোগ করে বলেন, মইজ্জ্যেরটেক এলাকার মো. সোলায়মান, মোহাম্মদ জিয়া, বাদশা, বাহাদুর রহমান, সুমন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা পরিচয়ে সিএনজি অটোরিকশা গুলোকে কার্ড নিতে বাধ্য করান। এসব কার্ডের বিনিময়ে তাদের প্রতিমাসে দিতে হয় ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব কার্ড পুলিশকে দেখালে তারা গাড়ি ছেড়ে দেন। এছাড়াও পুলিশ গাড়ি আটক বা মামলা দিলে তারাই ছাড়িয়ে আনেন গাড়ি।
তবে এসব সংগঠনের নেতা পরিচয়ে মো. সোলায়মান, মোহাম্মদ জিয়া, বাদশা, বাহাদুর রহমান, সুমন এসব বিষয় অস্বীকার করে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার বলেন, ‘সড়কে নাম্বার বিহীন অটোরিক্সা সিএনজি এবং ব্যাটারী চালিত রিক্সাগুলোর বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। আজও (রোববার) পুলিশ ৫টি নাম্বার বিহীন গাড়ি আটক করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখবে পুলিশ কোনো সংগঠনের আইডি কার্ড না। এসব আইডি কার্ডধারীদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সার্জেন্টসহ দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। আইডি বা টোকেন দেখিয়ে যাতে কোনো গাড়ি ছাড় না পাই। এছাড়াও অনেক সময় ওইসব ভূঁইফোড় শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আমার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে অবৈধ নাম্বার বিহীন গাড়ি গুলো আটকের ক্ষেত্রে। তারপরও আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিই না।’




Comments