হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বেজুড়া এলাকায় ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের পাশে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক চালক বিশ্রামাগারটি টেন্ডার প্রক্রিয়া না হওয়ায় এখনও চালু হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকায় ভবনটি ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ দীর্ঘপথে যাতায়াতকারী চালকদের নিরাপদ বিশ্রামের সুযোগ দিতে প্রকল্পটি হাতে নেয়। প্রায় সাত একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই আধুনিক কমপ্লেক্সে রয়েছে ডরমিটরি, বিশ্রামকক্ষ, আধুনিক টয়লেট, পার্কিং স্পেস, খাবারের ক্যান্টিন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পটি চালু হলে শুধু চালকরাই নয়, স্থানীয় অর্থনীতিও উপকৃত হতো। দোকান, হোটেল ও সার্ভিস পয়েন্ট গড়ে উঠলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হতো। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় ভবনটি এখন ধুলায় ঢেকে অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, “প্রথমে খুব দ্রুত কাজ হচ্ছিল। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর ধরে ভবনটি পড়ে আছে। সরকারের টাকায় তৈরি এই স্থাপনাগুলো অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
হবিগঞ্জ জেলা চালক ইউনিয়নের সভাপতি আবু মিয়া বলেন, “এই প্রকল্পটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। মহাসড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করে। ক্লান্ত চালকরা অনেক সময় গাড়ির ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়েন—এতে দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্রামাগারটি চালু হলে অনেক দুর্ঘটনা রোধ করা যেত। এখন এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, রাতে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে; চোর–ছিনতাইকারীদের আস্তানায় পরিণত হচ্ছে।”
ট্রাকচালক বেনু মিয়া বলেন, “দিন–রাত গাড়ি চালিয়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, কোথাও বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা নেই। এই বিশ্রামাগারটি ছিল আমাদের আশার জায়গা। এখন ভবনটা ধুলায় ঢেকে আছে—দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়।”
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (সেকশন অফিসার) সাইফুল ইসলাম বলেন, “২০২৪ সালের জুন মাসে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এরপর থেকে প্রায় ১৬ মাস ধরে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের অপেক্ষায় আছে প্রকল্পটি। টেন্ডার সম্পন্ন হলে নির্ধারিত ব্যক্তি এটি পরিচালনা ও ভাড়া কার্যক্রম শুরু করবেন। আমরা দ্রুত টেন্ডার সম্পন্নের জন্য চেষ্টা করছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, “এই বিশ্রামাগারটি চালু হলে চালকদের জন্য নিরাপদ বিশ্রামের ব্যবস্থা হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে। সওজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা জেনে দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা ১১ কোটি টাকার এই বিশ্রামাগারটি যেন দ্রুত চালু হয়—এটাই এখন চালক ও স্থানীয়দের একমাত্র প্রত্যাশা।




Comments