Image description

রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলা মিষ্টি পানের জন্য বিখ্যাত। এই ঐতিহ্যবাহী কৃষি পণ্য ৩১ আগস্ট ২০২৩-এ জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) স্বীকৃতি লাভ করে, যা স্থানীয় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। উপজেলায় প্রায় ৪৫-৫০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ -পরোক্ষভাবে পান চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ১৩১৭ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পানের বরজ, যা কৃষকদের প্রধান আয়ের উৎস। 

অতিবৃষ্টি ও রোগবালাইয়ের  চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে  তারিখ ১৫.১১.২০২৫ ইং রোজ: শনিবার, চিকন পান বিড়ায় ২০-২৫ টাকা, মাঝারি ৪০-৫০ টাকা এবং বড় আকারের ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

পান চাষের লাভজনকতা ক্রমশ বাড়ছে, ফলে বরজের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার একদিলতলা, কুঠিবাড়ি, ধোপাঘাটা ও মৌগাছী এলাকায় কেন্দ্রীভূত এই পান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে এবং বিদেশেও রপ্তানি হয়। সপ্তাহে দুই দিন করে স্থানীয় হাটে পানের বেচাকেনা হয়, যেখানে কৃষকরা সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভ হয়, যা কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছে। সারা বাংলাদেশে এবং বিদেশে মোহনপুরের পানের চাহিদা অটুট।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে প্রতি বিঘা জমিতে মাটির আইল, বেড়া, ছাউনি, শ্রমিক ও পানের লতায় ১ থেকে ১.৫ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে খরচ সামান্য হয়ে থাকে। এবং বার্ষিক লাভ ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা পাওয়া যায়। 

একদিলতলার কৃষক আব্দুর রহমান (৫০) বলেন, “বিগত সময়ে পানের দামের তুলনায় এখন একটু বৃদ্ধি পেয়েছে এটা আশার দিক। এবং অতিবৃষ্টির সময় রোগবালাইয়ের ভয় থাকে, কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শ মেনে চললে ফলন অটুট থাকে। মোহনপুরের পানের মিষ্টি স্বাদ সবাই চেনে, এটাই আমাদের গর্ব।”

অন্যদিকে, কুঠিবাড়ির কৃষক নাসির উদ্দীন (৪৫) বলেন, “আমি একা পরিবার চালাই, পান চাষে স্বাবলম্বী হয়েছি। হাটে সরাসরি বিক্রি করলে দালালের ঝামেলা নেই। তবে রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ওষুধের দরকার। সরকার যদি আরও সহায়তা দেয়, তাহলে চাষ আরও বাড়বে। আমাদের পান দেশ-বিদেশে পৌঁছে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুল মতিন বলেন, “পান চাষের উৎপাদন খরচ কম এবং অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় উপজেলায় আবাদ দিন দিন বাড়ছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় বাজারমূল্য বেড়েছে, যা কৃষকদের উৎসাহিত করছে। আমরা নিয়মিত কর্মশালা করে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক চাষ পদ্ধতি শেখাচ্ছি। সরকারি সহায়তায় বীজ-সারের সুবিধা দিচ্ছি, যাতে ফলন আরও বাড়ে।