খুলনার পাইকগাছায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধাপে ধাপে দাম বাড়লেও চলতি সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের সবজি, মাছ ও মাংসের বাজারে নতুন করে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। চলতি শীতের মৌসুমে শাক সবজির প্রাচুর্য তবুও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আগুন। সরবরাহ বৃদ্ধি পেলেও দাম নিয়ন্ত্রণে না আসায় ক্রেতাদের মনে অস্বস্তি বিরাজ করছে।
আগের তুলনায় অধিকাংশ পণ্যের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা, যারা মাসিক আয়ের সঙ্গে বাজার খরচ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পাইকগাছার পৌর বাজারসহ আশপাশের গ্রামীণ বাজারগুলোতে মাংসের দাম সবচেয়ে বেশি উর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ টাকায়। ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা ও ভেড়ার মাংস ৯০০ টাকা নির্ধারণ করায় অধিকাংশ ক্রেতাই মাংস কিনতে গিয়ে পিছিয়ে আসছেন।
দেশি মুরগি ২৫০ টাকা এবং লেয়ার ২৫০–২৬০ টাকায় পাওয়া গেলেও এগুলোও স্থিতিশীল নয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। ফলে উৎসব-অনুষ্ঠান তো দূরের কথা, সাধারণ দিনেও পরিবারের জন্য পুষ্টিকর প্রোটিন কেনা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
মাছের বাজারেও একই অবস্থা।
ভেটকি মাছ কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা, টেংরা ৪০০–৪৫০, দাতনী মাছ ৬৫০ এবং চালী চিংড়ি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হলো। রুই মাছের দামও বেড়ে ২৪০–২৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
তবে পাঙ্গাশের দাম কিছুটা কমে ১৬৫ টাকায় এসেছে, যা গত সপ্তাহে ছিল কেজি ১৮০ টাকা।
বাজারে ক্রেতাদের মন্তব্য—জনপ্রিয় মাছগুলোর দাম বাড়ায় বাজারের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং খাদ্য তালিকাতেও তার প্রভাব পড়ছে।
সবজি বাজারে আগুন—কাঁচা মরিচ থেকে শুরু করে টমেটো-গাজর পর্যন্ত, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির বাজার সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে।
কাঁচা মরিচ ১২০–১৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০–১৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১২০–১৩০ টাকা ১০ টাকা বৃদ্ধি, সাধারণ পেঁয়াজ ৮০–৯০, আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা , বাঁধাকপি ৪০ টাকা (১০ টাকা বৃদ্ধি), ফুলকপি ৬০ থেকে ৭০, টমেটো ১০০, গাজর ১০০, শসা, ৮০–৯০, মুলা ৩০, কচু ৫০, পেঁপে ২৫–৩০ টাকা, এদিকে ওলকপি কিছুটা কমে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ২০ টাকা কম।
বাজারে আসা রাজীব হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, এখন বাজারে গেলে ভয় লাগে। যে পণ্যই ধরি, আগের চেয়ে বেশি দাম। সবজির বাজারে আগুন লেগেছে, মাছ-মাংসের দামও সামলানো যাচ্ছে না। মাঝারি আয় দিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
আরেক গৃহিণী শিখা রানী বলেন, প্রতিদিন বাজারে গিয়ে হিসাব বদলে ফেলতে হয়। এক সপ্তাহে ২০০ টাকার সবজি কিনতে এখন লাগে প্রায় ৩০০–৩৫০ টাকা। আয়ের থেকে ব্যায় বেশি। তরিতরকারি এত দাম ৫০ টাকার নিচে কোন তরিতরকারিতে হাত দেওয়া যায় না।
বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পাইকারি বাজারে পণ্যের সরবরাহ কম, মালবাহী গাড়ির ভাড়া বেড়েছে। এসব কারণে তারা বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের দাবি, দাম বাড়ানোর পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নেই, বরং বাজার পরিস্থিতির কারণে তারা দাম ধরে রাখতে পারছেন না।
স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, বাজারে মনিটরিং দুর্বল হওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
তাদের আশঙ্কা, যদি এখনই প্রশাসনিক তদারকি বাড়ানো না হয়, সামনে শীতের মৌসুমে কিছু পণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
নিয়মিত বাজার তদারকি, ওজন যাচাই, মূল্যতালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা এবং সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর সরকারি নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের সহ্যসীমা অতিক্রম করবে বলে স্থানীয়রা জানান।




Comments