Image description

দেশের নদ-নদী ও সাগরগুলোর ভয়াবহ পরিণতির অন্যতম কারণ অবাধ ও অবৈধ বালু উত্তোলন। রাজনৈতিক দলমতনির্বিশেষে বালুখেকোদের একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে, যার সঙ্গে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের ফলে একদিকে যেমন নদী ও সাগরের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় বসতবাড়ি ও উপকূলীয় বাঁধ। এর জ্বলন্ত উদাহরণ এখন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূল।

সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলের ২০ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে চলছে নির্বিচার বালু উত্তোলন। সাগরের মধ্যে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে সাগর থেকেই সেসব বালু নৌযানে করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রভাবে সীতাকুণ্ডের পর্যটন সম্ভাবনাময় ‘গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত’ এখন তীব্র ভাঙনের কবলে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকতের সম্মুখভাগের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিক থেকে মাসের পর মাস ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে সাগরের তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় উপকূল ভেঙে সাগরে বিলীন হতে শুরু করেছে। সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই পর্যটন স্পটটি এখন হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। সৈকতের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে এবং উপকূলীয় বনায়নের বহু গাছপালা সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে।

পর্যটকদের কাছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত জনপ্রিয় হলেও গুলিয়াখালী সৈকতের আবেদন ভিন্ন। এখানে বালুময় তীরের বদলে রয়েছে সবুজ ঘাসের গালিচা আর শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন। পর্যটকদের চাপ সামলাতে এবং পর্যটনশিল্পের বিকাশে ২০২২ সালে তৎকালীন সরকার গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতকে ‘পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে। 

এরপর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কারসহ নানান উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সৈকতের বিশাল অংশ অল্প সময়ের মধ্যেই সাগরে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিকেলে সৈকতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, গুলিয়াখালী উপকূল সবুজের চাদরে মোড়া। দীর্ঘ উপকূলজুড়ে ঘন সবুজ ঘাস, শ্বাসমূল আর হালকা বালু সব মিলিয়ে এটি অনন্য। কিন্তু সৈকতের ভাঙন দেখে তারা হতাশা প্রকাশ করেন।

স্থানীয় গুলিয়াখালী গ্রামের কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই উপকূলের বিভিন্ন স্থানে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। গুলিয়াখালীর উত্তরে সৈয়দপুর এবং দক্ষিণে কুমিরা ও বাড়বকুণ্ড পয়েন্টে বিরামহীনভাবে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে সাগরের মাটির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে এবং সৈকত ভেঙে বিলীন হচ্ছে।

এ বিষয়ে গুলিয়াখালী বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক মাসে আমি বিচ এলাকায় যাইনি। এর মধ্যে যে ভাঙন শুরু হয়েছে, তা কেউ আমাকে জানায়নি। আমি সরেজমিনে ঘুরে দেখব।’

বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমোদন দিইনি। শুনেছি তারা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন নিয়ে বালু তোলে। তবে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’