Image description

কুষ্টিয়ায় বিজয়ের দিনে পঁচিশ এতিম মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ ইকবাল হোসেন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলায় এসব মায়েদের নানা প্রকার খাবার খাওয়ালেন তিনি। আর পেট ভরে খেতে পেয়ে আত্মতৃপ্তিতে বৃদ্ধাশ্রমে ফিরেছেন জীর্ণ শীর্ণ ক্ষুধার্ত মায়েরা। তবে এ ব্যবস্থা সরকারি কোনো সহযোগিতায় নয়। একান্তই কুষ্টিয়া নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ ইকবাল হোসেনের ব্যক্তিগত সদিচ্ছায়। কোন লোভের মোহ নয়, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতেই এই প্রয়াস। 

জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের সাদ্দাম বাজার মোড় এলাকায় সার্কিট হাউজের সামনে উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের খোঁজ পান কুষ্টিয়ার নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ ইকবাল হোসেন। খবর পেয়ে গত দুইদিন আগে ছুটে যান ওই বৃদ্ধাশ্রমে। দেখতে পান জীর্ন শীর্ন বয়োবৃদ্ধ হতভাগা পঁচিশ মায়ের স্থান। সবার চোখে এক অনাকাঙ্ক্ষিত অশ্রুসিক্ত হাসি। শত কষ্টের মধ্যেও জেলার এই মহামানবকে দেখে আবেগ আপ্লুত। চাহনি অনেক। কেউ বলে আমি গরুর মাংস খাব, কেউ বলে খাসির মাংস আবার কেউ বলে বড় ইলিশ মাছ খাব। অনেকে বলে শীতে কষ্টে আছি। আর এসব চাওয়ার ঝুলি নিয়ে ফিরে যান জেলা প্রশাসক। 

অবশেষে বিজয়ের দিনে মঙ্গলবার দুপুরে নিজ উদ্যোগেই নিজের সরকারি ডাক বাংলোয় এতিম মাদের ডেকে খাওয়ান এবং নিজেও তাদের সাথে খাবার খান। বিভিন্ন প্রকার খাবারের মধ্যে ছিল গরু, ছাগলের মাংস, ইলিশ মাছ, মুরগির মাংস ও রোস্ট, দইসহ যে যেটা খেতে চেয়েছিল সেটাই খাওয়ানো হয়। এ সময় তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে গায়ের চাদর। এ ঘটনা মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুষ্টিয়া নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ ইকবাল হোসেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ এতিম মা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুরের লক্ষ্মীপুর এলাকার ছারভানু বলেন, আমার দুই মেয়ে, এক ছেলে এবং স্বামী কেউ বেঁচে নেই। এলাকার লোক এসে এই বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে গেছে।  অনেকদিন আছি। আমরা খুব কষ্টে আছি। 

আমেনা খাতুন নামে আরেক মা জানান, গত দুইদিন আগে ডিসি স্যার আমাদের এখানে কম্বল দিতে এসেছিল। তিনি সেদিন বলেছিলেন, আপনারা কে কি খাবেন। আপনাদের আশা কি। আমরা একেকজন একেকটা খাবার খেতে চেয়েছিলাম। তিনি তাই আমাদের খাওয়াইছেন। তিনি আমাদের সাথেই খেয়েছেন। আমরা আত্মা ভরে খেয়েছি। আমাদের খুব ভালো লেগেছে। তিনি খুব ভালো মনের মানুষ। আল্লাহ তার ভালো করুক। 

উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইফতিখার হোসেন মিঠু বলেন, ডিসি স্যার কম্বল দিতে এসে আমাদের এই ঝুপড়ি ঘরের বৃদ্ধাশ্রমে এসে মায়েদের দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি এসব মায়েদের কি কি খাওয়ার ইচ্ছা জানতে চান। তাদের ইচ্ছামতো ডিসি স্যার তার ডাকবাংলোই ডেকে নিয়ে তৃপ্তি ভরে খাওয়ান এবং নিজেও খান। এটা এক অন্যরকম ঘটনা। এমন দৃষ্টান্ত কুষ্টিয়ায় বেশ আলোচনায় এসেছে। মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সরকারের একজন সেবক হয়ে।