গৌরীপুরে বর্ষসেরা চা-প্রেমী সম্মাননা দিলেন চা বিক্রেতা হারুন
‘মাদক ছেড়ে চা ধরুন, মোবাইল আসক্তি কমিয়ে বই পড়ুন’- এই ব্যতিক্রমী স্লোগানকে সামনে রেখে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বর্ষসেরা চা-প্রেমী সম্মাননা’। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চা বিক্রেতা হারুন মিয়ার আয়োজনে এক বর্ণাঢ্য মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মাধ্যমে এই উৎসবমুখর আয়োজন সম্পন্ন হয়।
পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলোতে মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা শেষে স্বজন সমাবেশ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস।
ইসলামাবাদ ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মো. এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে এবং গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক কবি সেলিম আল রাজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক ও চা বিক্রেতা হারুন মিয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "হারুন মিয়া গৌরীপুরের একজন আলোকিত মানুষ। একজন সাধারণ চা বিক্রেতা হয়েও তিনি যেভাবে সমাজ সচেতনতা, মাদকবিরোধী আন্দোলন এবং পাঠাগার তৈরি করে বই পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন, তা অবিশ্বাস্য। হারুনের মতো তরুণরা যদি এভাবে সামাজিক কাজে জড়িয়ে থাকে, তবে সমাজ থেকে সব অন্ধকার দূর হয়ে যাবে।"
হারুন মিয়ার এই জীবন সংগ্রাম ও সমাজসেবা এলাকার মানুষের জন্য এক বড় উদাহরণ। ২০১২ সালে অভাবের তাড়নায় গৌরীপুর পৌর শহরের কালীখলা এলাকায় চা বিক্রি শুরু করেন হারুন। কিন্তু জীবন যুদ্ধে তিনি দমে যাননি। পরিবারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে তার দোকানের সেরা গ্রাহকদের ‘বর্ষসেরা চা-প্রেমী সম্মাননা’ প্রদান করে আসছেন। শুধু তাই নয়, নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়ে বর্তমানে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত আছেন।
২০২৩ সালে নিজের চা স্টলে ছোট্ট পরিসরে ‘হারুন পাঠাগার’ শুরু করলেও বর্তমানে তার সংগ্রহে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার বই। মুক্তিযোদ্ধার চায়ে অর্ধেক দাম, মাদক ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বাবা হারানো হারুন বর্তমানে তার মা ও ছোট বোনের পড়াশোনার দায়িত্ব একাই সামলাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাবুই প্রকাশনীর সম্পাদক কাদের বাবু, দিনাজপুরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রীতা মন্ডল, অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ, সাংবাদিক মো. রইছ উদ্দিন, আলম ফরাজী, ফারুক আহাম্মদ, শামীম খান প্রমুখ।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে হারুন মিয়া বলেন, "আমার স্বপ্ন হলো এই পাঠাগারটিকে আরও বড় করা, যাতে আরও বেশি মানুষ বই পড়ার সুযোগ পায়। আমি চাই মাদক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার করতে এবং মানুষের উপকারে আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রাখতে।"
অনুষ্ঠান শেষে হারুন মিয়ার দোকানের নিয়মিত ও সেরা চা-প্রেমী গ্রাহকদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।




Comments