ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় কারখানার ফ্লোর ম্যানেজারের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছে র্যাব। র্যাব-১৪ জানিয়েছে, দিপুকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করার পর কারখানার ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেন তাকে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব-১৪ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিচালক মো. নাঈমুল হাসান। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফ্লোর ম্যানেজারসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্তরা হলেন- পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানির ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেন (৩৮) এবং কোয়ালিটি ইনচার্জ মিরাজ হোসেন আকন (৪৬)। বাকি আটজন হলেন- তারেক হোসেন, লিমন সরকার, মানিক মিয়া, এরশাদ আলী, নিঝুম উদ্দিন, আজমল হাসান সগীর, শাহিন মিয়া ও মো. নাজমুল। এদের মধ্যে সাতজনকে র্যাব এবং তিনজনকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা নাঈমুল হাসান বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ দিপুকে জোরপূর্বক ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন। এরপর তিনি দিপুকে পুলিশের হাতে না দিয়ে বা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সরাসরি উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেন। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপরাধমূলক আচরণের কারণে কারখানার দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
র্যাব পরিচালক আরও বলেন, “আমরা বারবার জানার চেষ্টা করেছি দিপু কী বলেছেন বা কার কাছে বলেছেন কিন্তু এর কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর কেউ দিতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এর পেছনে পূর্ব কোনো শত্রুতা ছিল কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে কোনো নাগরিককে এভাবে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে মারা কোনোভাবেই আইনসম্মত নয় এবং সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটি বরদাশত করবে না।”
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকায় পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানির শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে (২৮) ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তার মরদেহ গাছের ডালের সঙ্গে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নিহত দিপু তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি গত দুই বছর ধরে ওই কারখানায় কাজ করছিলেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে ভালুকা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তভার পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও ছায়া তদন্ত হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।




Comments