কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের বালুচর এখন পর্যটকের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। গতকাল থেকেই নোনাজল আর বালুচরে পর্যটকদের আনন্দ ও হৈ-হুল্লোড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে সৈকত। পর্যটকের এই বিপুল সমাগমে যেমন জমে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা, তেমনি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের প্রধান তিনটি পয়েন্ট- লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলীতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধু মানুষের ভিড়। ঢেউয়ের সঙ্গে খুনসুটি আর বালুচরে ঘুরে বেড়ানোর মাধ্যমে কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ছুটে আসছেন হাজারো মানুষ।
সৈকতে আসা পর্যটক কামরুন্নাহার বলেন, “কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত উপভোগ করার জন্যই আসছি। মূলত এই বিপুল লোক সমাগমের মধ্যেই সৈকত উপভোগের আলাদা একটি সৌন্দর্য আছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে সবাই মিলে আনন্দ করার অনুভূতি অসাধারণ।”
ইফতেখার মাহমুদ নামে আরেক পর্যটক বলেন, “বিয়ের ১৯ বছর পর এই প্রথম স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজার আসলাম। বিনোদনের জন্য এই সৈকত সত্যিই অনেক উপভোগ্য।” গাজীপুর থেকে আসা এক পর্যটক জানান, জীবনে প্রথমবার সমুদ্র দেখতে এসেছেন তিনি। সাগরের নোনাজল এখনো ছোঁয়া না হলেও বিশাল সমুদ্র দেখে তিনি অভিভূত।
পর্যটকের এমন জোয়ারে দারুণ খুশি সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘদিনের লোকসান কাটিয়ে ব্যবসায় আবারও স্বস্তি ফিরছে। বার্মিজ পণ্যের দোকানদার ইকবাল বাহার জানান, গত সপ্তাহে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকার বেশি বেচাবিক্রি না হলেও বর্তমানে পর্যটক বাড়ায় দৈনিক ৩০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। আচার ও টুপি বিক্রেতা কফিল বলেন, “পর্যটক অনেক বেড়েছে, সামনে আরও বাড়বে বলে আশা করছি। এখন যেভাবে বেচাবিক্রি হচ্ছে তাতে পেছনের লোকসান দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।”
তবে পর্যটকের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের মহাব্যবস্থাপক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, “লাবণী পয়েন্ট থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত এলাকাটি পর্যটকদের অবাধ চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই জোনটিকে অন্যান্য এলাকা থেকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের উচিত এই অঞ্চলকে বিশেষ নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার আওতায় রাখা, যাতে পর্যটকরা কোনো ধরনের অনিরাপত্তা বোধ না করেন।”
পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, পর্যটকের আগমনে সৈকত ফিরে পেয়েছে প্রাণ। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে এবং কক্সবাজারকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। এটি সম্ভব হলে পর্যটন খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে তাঁরা মনে করেন।




Comments