নীলফামারীর জলঢাকায় আলুর বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে প্রতি কেজি নতুন আলু পাইকারি দরে মাত্র ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম। ফলে লাভের বদলে বড় অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকদের ‘মাথায় হাত’ পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জলঢাকায় প্রায় ২ হাজার ৮ শত ৮৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ইতোমধ্যে ৩ শত ২০ হেক্টর জমির আলু তোলা সম্পন্ন হয়েছে।
গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় অনেক কৃষক লাভের আশায় এবার সর্বস্ব বাজি ধরে আলু চাষ করেছিলেন। কেউ গরু বিক্রি করে, কেউ এনজিওর ঋণ নিয়ে আবার কেউ চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় সেই স্বপ্ন এখন ফিকে হয়ে আসছে।
পৌর এলাকার ডাকুরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক হেমন্ত কুমার রায় বলেন, “দুটি গরু বিক্রি করে এবার ছয় বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। চাষাবাদে খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু পাইকাররা এখন পুরো জমির আলু ৯০ হাজার টাকার বেশি বলছে না। লাভের আশায় দিনরাত পরিশ্রম করলাম, এখন উল্টো ৩০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।”
একই করুণ চিত্র মীরগঞ্জ পাঠান পাড়ার কৃষক সাইদুল ইসলামের। তিনি বলেন, “গতবার আলু বেচে তিনটি ঘর পাকা করেছিলাম। এবারও লাভের আশায় সুদের ওপর টাকা নিয়ে আলু লাগিয়েছি। কিন্তু এখন আসল দামও উঠছে না। সুদের টাকা কীভাবে শোধ করব, তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।”
কৃষকদের এই সংকটের পেছনে বেশ কিছু কারণ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। গত মৌসুমের অনেক আলু এখনো হিমাগারে মজুত থাকা এবং নতুন আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম থাকাকেই দাম হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
জলঢাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়া এবং হিমাগারে পুরোনো আলুর মজুত থাকায় নতুন আলুর বাজার দর কিছুটা কমে গেছে। আমরা কৃষকদের আলুর পাশাপাশি সরিষা, ভুট্টা ও গমের মতো বৈচিত্র্যময় ফসল আবাদের পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে তারা বড় ধরনের লোকসান এড়াতে পারেন।”
তবে স্থানীয় চাষিদের দাবি, সরকারিভাবে আলুর নায্যমূল্য নির্ধারণ এবং রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া না হলে অনেক কৃষক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বেন। তারা এই সংকট উত্তরণে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।




Comments