একপাশে জিও ব্যাগ, অন্যপাশে বালু উত্তোলন: হুমকির মুখে ধলাই নদীর বাঁধ ও ব্রিজ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় একদিকে যখন চলছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জিও ব্যাগ স্থাপনের কাজ, ঠিক তার পাশেই ড্রেজার দিয়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এর ফলে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত দু’টি স্টিল ব্রিজ এবং নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও বন্ধ হচ্ছে না এই বালু উত্তোলন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রহিমপুর ইউনিয়নের মৃর্ত্তিঙ্গা চা বাগানের স্টিল ব্রিজের সন্নিকটে ধলাই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে পাউবো। অথচ একই স্থানে নদীর মাঝখান থেকে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় এক ইজারাদার। গত প্রায় দুই মাস ধরে ব্রিজের তলদেশ ও প্রতিরক্ষা বাঁধের একেবারে কাছ থেকে বালু তোলায় ওই এলাকার ধর্মপুর ও রামচন্দ্রপুর অংশের বাঁধ এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ধর্মপুর ও রামচন্দ্রপুরের মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ধলাই নদীর উপর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্টিল ব্রিজ রয়েছে। কয়েক বছর আগে মৃর্ত্তিঙ্গা ব্রিজের উত্তর পাশে প্রায় দুইশ মিটার বাঁধ ভেঙে এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেই ভাঙন রোধে কাজ শুরু করলেও পাশেই বালু উত্তোলন চলায় সরকারি এই উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মাটি ও বালি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অমান্য করে এভাবে বালু তোলাকে ‘আত্মঘাতী’ বলে অভিহিত করেছেন তারা।
অভিযুক্ত ইজারাদার খোরশেদ আলম অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর ইজারার নির্ধারিত স্থানটি ব্রিজের কাছাকাছি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকায়। তাই তিনি নিয়ম মেনেই বালু তুলছেন।
তবে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "ব্লকের পাশ থেকে কোনোভাবেই বালু উত্তোলন করা যাবে না।"
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, "ব্রিজের সন্নিকট থেকে কোনো অবস্থাতেই বালু উত্তোলন করা যাবে না। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোসা. শাহীনা আক্তার জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনও’কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নদীর বাঁধ ও জনপদ রক্ষায় অবিলম্বে এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা।




Comments