কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ: ৪০০ লিটার রাসায়নিক উদ্ধার
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি মাদ্রাসা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় বিপুল পরিমাণ তরল রাসায়নিক ও ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের পর তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ঘটনার মূল সন্দেহভাজন ও মাদ্রাসা পরিচালক শেখ আলামিন বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এসব তথ্য জানান।
গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকার ‘উন্মুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা’র একটি একতলা ভবনে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আলামিনের স্ত্রী আসিয়া (৩০) এবং তাদের তিন সন্তান (বয়স ১০ বছর, ২ বছর ও ৬ মাস) আহত হন। বিস্ফোরণের পর আলামিন আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও স্ত্রী-সন্তানদের সেখানে রেখে কৌশলে আত্মগোপনে চলে যান।
পুলিশ সুপার জানান, বিস্ফোরণের পর সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেখান থেকে প্রায় ৪০০ লিটার তরল রাসায়নিক (কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড লেখা), চারটি ককটেল সদৃশ বস্তু, একটি মনিটর, হ্যান্ডকাফ ও পুরনো বেল্ট উদ্ধার করা হয়।
ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শেখ আলামিনের স্ত্রী আসিয়া, বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার এবং পরবর্তী অভিযানে ঢাকার বাসাবো এলাকা থেকে আসমানি খাতুন নামে তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, শেখ আলামিনের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি দুবার কারাবরণ করেছিলেন। ২০২৩ সালে জামিনে মুক্তির পর তিনি অটোরিকশা ও উবার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের আড়ালে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় কোনো বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল কি না এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, "ঘটনাস্থলে মজুদকৃত রাসায়নিক ও বিস্ফোরক সরঞ্জামের ধরন দেখে মনে হচ্ছে তারা বিপজ্জনক কিছু তৈরির চেষ্টা করছিল। নির্বাচনের আগে নাশকতার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এখনই কোনো জঙ্গি সংগঠনের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।"
পুলিশ জানায়, মুফতি হারুন নামে এক ব্যক্তি মাদ্রাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন, যিনি বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিস্ফোরণে ভবনটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও আশপাশের লোকজনের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। আহত শিশুদের মধ্যে বড় ছেলে উম্মায়ের আঘাত কিছুটা গুরুতর হলেও তারা বর্তমানে শঙ্কামুক্ত।
নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, "জনবহুল এলাকায় এমন বিস্ফোরক মজুদ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীদের উচিত ভাড়াটিয়াদের গতিবিধি ও সন্দেহজনক কোনো কর্মকাণ্ড নজরে এলে দ্রুত পুলিশকে জানানো।"
এ ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে এবং মূল অভিযুক্ত শেখ আলামিনকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।




Comments