চুয়াডাঙ্গার দর্শনা-নীমতলা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক পুশইন করা ১৪ নাগরিককে পুনরায় ভারতে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুরে ৪৭ বিজিবির তত্ত্বাবধানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুশব্যাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ভুক্তভোগীরা সবাই ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের জগশ্বরপুর জেলার বাসিন্দা। ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ৪ জন শিশু রয়েছে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়ে ভারতের নদীয়া জেলার গেঁদে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিএসএফ ওই পরিবারটিকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। সীমান্ত পার হয়ে তারা প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। দীর্ঘ সময় অভুক্ত ও তীব্র শীতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাদের খাবার ও পোশাক দিয়ে সহায়তা করে এবং বিষয়টি প্রশাসনকে জানায়।
পরে রাত ১০টার দিকে দর্শনা থানা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বিজিবির কাছে আটক জব্বার আলি (৭০) অভিযোগ করেন, "আমরা সবাই ভারতের বৈধ নাগরিক। কিন্তু আমাদের আধার কার্ড ও নাগরিক পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে কেবল মুসলিম হওয়ার কারণে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন বা পরিচয় নেই।"
উদ্ধারকৃতরা হলেন- গুলসান বিবি (৯০), জব্বার আলি (৭০), আলকুম বিবি (৬৫), উকিল শেখ (৪৩), সাবেরা বিবি (৩৪), হাকিম আলি (৪৫), সামসেরা বিবি (৪২), শেখরাজ (৩২), মেহেরুন বিবি (২৫), রহিদ আলি (৩৪), শেখ বান্টি (২৮), শাকিলা খাতুন (১০), নাছরিন নেছা (১২) ও মো. তৌহিদ আলি (১৪)।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি হাসান জানান, নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিজিবির তত্ত্বাবধানে তাদের দুদিন নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছিল। চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা-জীবননগর সার্কেল) মো. আনোয়ারুল কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন ও মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘনের এই ঘটনায় বিজিবি তাৎক্ষণিকভাবে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ জানায়। পরবর্তীতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের ১৪৬ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট শ্রী প্রেমপাল সিংয়ের উপস্থিতিতে রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের ভারতের অভ্যন্তরে ফেরত পাঠানো হয়। বিজিবির মোহাম্মদপুর কোম্পানি কমান্ডার এবং বিএসএফের জলংগী কোম্পানি কমান্ডারের সমন্বয়ে পুশব্যাক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।




Comments