Image description

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তদন্তে নতুন অগ্রগতি হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা হাদির শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি; বরং তার মস্তিষ্কের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমকে জানান, হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নতুন করে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এর আগে হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি (নম্বর ৫৪-৬৩৭৫) শনাক্ত করে এর মালিক আব্দুল হান্নানকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। হান্নান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা এবং পেশায় শ্রমিক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মোটরসাইকেলের মালিকানার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাকে পল্টন মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া, এই হত্যাচেষ্টার সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ও তার আইটি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।

রোববার সকালে হাদির চিকিৎসার জন্য গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের জরুরি বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, হাদির শারীরিক অবস্থার কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। ক্লিনিক্যালি তিনি আগের মতোই অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন।

চিকিৎসকরা জানান, রোববার সকালে করা সিটি স্ক্যান রিপোর্টে হাদির মস্তিষ্কে ব্যাপক ইডেমা (পানি জমা) এবং অক্সিজেনের তীব্র ঘাটতি ধরা পড়েছে। মস্তিষ্কের কিছু অংশে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণও দেখা গেছে। ব্রেন স্টেম ইনজুরি গুরুতর অবস্থায় রয়েছে এবং অস্ত্রোপচারের বিপরীত পাশ দিয়ে মস্তিষ্ক সামান্য বাইরের দিকে চাপ দিচ্ছে।

বর্তমানে লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখা হয়েছে। তবে তার কিডনি স্বাভাবিক কাজ করছে এবং ফ্লুইড ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। রক্ত জমাট বাঁধা সংক্রান্ত জটিলতা (ডিআইসি) অপরিবর্তিত রয়েছে।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য হাদিকে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে একটি ‘কেস সামারি’ প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে বর্তমান শারীরিক অবস্থায় তাকে বিদেশে স্থানান্তর করা কতটা নিরাপদ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে, ওসমান হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের ভারত থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বিভিন্ন পাবলিক প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা খুব কাছ থেকে ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। গুলিটি তার মাথার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকেই তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন।