২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছঘাটসহ আশপাশের হাটবাজারগুলোতে আসছে অধিকাংশই বরফ যুক্ত ইলিশ। দেখে যে কেউ সহজেই বুঝে, এসব ইলিশ দীর্ঘসময় বরফ যুক্ত ফ্রিজিং করা। যে কারণে এসব ইলিশের স্বাদ ও গুণগত মান নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে ইলিশ বিক্রির বাজারগুলোতে গেলে এ দৃশ্য উঠে আসে।
রফিক নামে এক ক্রেতা জানান, গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম থাকায় মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত হতে জেলেরা আবার নদীতে মাছ ধরা শুরু করেন। ২৬ অক্টোবর থেকে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বড়স্টেশন মাছঘাটসহ বাজারগুলোতে ছোট-বড় সব ধরনের ফিশিং বোট নিয়ে মাঝিরা ইলিশ মাছ নিয়ে আসতে শুরু করে। অথচ বাজারে দৃশ্যমান রাখা ইলিশগুলো দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে এগুলো যে দীর্ঘদিন ফ্রিজিং করা। তাহলে টাটকা ইলিশ পেলাম কই?
ক্রেতা বজলু মিয়া বলেন, একেকটি ফিশিং বোটে বিভিন্ন সাইজের ৭০ থেকে ৮০ মণ ইলিশ মাছ নিয়ে বড়স্টেশন ঘাটে আসছেন জেলেরা। এর অধিকাংশ বোট ভোলা চরফ্যাসন ও মোহনপুরার আর কিছু চেয়ারম্যান ঘাট হতে আসছে।
ভোলার মোহনপুরার মাঝি জামাল ও সুমন জানান, দীর্ঘ ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিয়ে তারা চাঁদপুর মাছঘাটে আসেন ন্যায্য দামে ইলিশ মাছ বিক্রির আশায়। বড়স্টেশন মাছঘাটে এখন প্রচুর ইলিশ মাছের আমদানির খবর রয়েছে। তাই আমরা এখানে ইলিশ মাছ নিয়ে আসছি।
এদিকে সরেজমিন দেখা যায়, ইলিশের দরকষাকষিতে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। মৎস্য ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক, খুচরো ও পাইকারি ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর এখন বড়স্টেশন মাছঘাট। স্থানীয়দের চাহিদা মেটানোর পর ইলিশ এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় যেমন ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, সিলেটে সড়কপথে পাঠানো হচ্ছে। অনলাইনে পছন্দ করা ইলিশও বিক্রেতারাও ককশিটের বাক্সে দূরদূরান্তে পাঠাচ্ছেন।
সরেজমিন আরও দেখা যায়, ইলিশ মাছের আমদানির পাশাপাশি পাঙাশ মাছের আমদানিও চোখে পড়ার মতো। বড় ওজনের এসব পাঙাশ সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ১০ কেজি ওজনের কাতল মাছ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর চাঁদপুরের হোয়াইট গোল্ড খ্যাত এক কেজি ওজনের পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর একটু ছোট সাইজের ইলিশ মাছের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বড়স্টেশনের মাছঘাটের বর্তমান হালহকিকত ও মাছের বাজারমূল্য নিয়ে মাছঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সহসভাপতি বাদশা মাল ও ব্যবসায়ী নেতা মেজবা মাল বলেন, ২২ দিনের অভিযানের পর সবে তো মাছ আসতে শুরু করেছে। দূরের যেমন হাতিয়া সন্দ্বীপ বা আরও অন্যান্য অঞ্চলের মাছগুলোই বরফ মিশ্রিত একটু বেশি। তবে যা আছে তা সবার সামনেই। এখন দাম একটু বেশি মনে হলেও ইলিশ মাছের আমদানি বাড়লে দাম হয়তো কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে। ঘাটে এখনো বড় ইলিশ তেমন আমদানি হচ্ছে না।
ব্যবসায়ী মেজবা মাল বলেন, এটা আসলে প্রকৃতির খেয়াল। নদীতে বড় সাইজের ইলিশ থাকলে কম-বেশি জেলেদের জালে ধরা পড়বেই। হয়তো সামনে সিজন হলে পুরো মাছঘাট বড় ইলিশের দখলের থাকবে।




Comments