Image description

হাতে দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁছাছোলা ও নলি বসানোর কাজ শুরু করেছেন গাছিরা। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থেকে তোলা। | ছবি : সালাউদ্দীন কাজল

ভোরের শিশিরে ভেজা ঘাস, পাতায় কুয়াশার ছোঁয়া—সবকিছুই জানিয়ে দিচ্ছে, শীত আসছে। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় শুরু হয়েছে গাছিদের ব্যস্ততা। রাস্তার ধারে, পুকুরপাড়ে আর জমির আইলে এখন খেজুর গাছ প্রস্তুতের ধুম লেগেছে।

উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, নাটুয়ারপাড়া, চরগিরিশ, মানিকদাইসহ বিভিন্ন গ্রামে খেজুর গাছে চলছে প্রস্তুতির কাজ। গাছিরা ধারালো দা দিয়ে গাছের মাথার ডাল কেটে পরিষ্কার করছেন। স্থানীয়ভাবে এই প্রক্রিয়াটিই “কাম দেওয়া” নামে পরিচিত। কাম দেওয়া শেষে গাছে বাঁধা হয় মাটির হাঁড়ি, যাতে রাত্রিবেলায় মিষ্টি খেজুর রস জমে।

নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়নের অভিজ্ঞ গাছি মোবারক হোসেন জানান, “কার্তিক মাসেই রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিতে হয়। এবার একটু আগেই শুরু করেছি। একটা গাছ প্রস্তুত করতে একদিনের মতো সময় লাগে। রস সংগ্রহের জন্য মাটির হাঁড়ি ব্যবহার করা হয়, যার ধারণক্ষমতা ছয় থেকে দশ লিটার।”

তিনি আরও বলেন, “একটি গাছ থেকে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। তিন দিন রস তোলা হয়, পরের তিন দিন বন্ধ থাকে—এই নিয়মকেই আমরা ‘পালি দেওয়া’ বলি।”
বিকেল তিনটা থেকে গাছে হাঁড়ি বাঁধার কাজ শুরু হয়। আর ভোররাতে রস নামাতে গিয়েই গাছিদের শুরু হয় দিনের প্রথম ব্যস্ততা।

সংগৃহীত রস থেকেই তৈরি হয় লালচে সুগন্ধি গুড়—যার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। মোবারক বলেন, “এক কেজি গুড় বানাতে লাগে ১২ থেকে ১৫ কেজি রস। এখন বয়স বেড়েছে, আগের মতো কাজ করতে পারি না। আগে ১০০টির বেশি গাছের রস তুলতাম, এখন ৫০-৬০টিতেই সীমাবদ্ধ।”

অন্য গাছিরা—রোকন, জুলহাস, পরিতোষ ও হাসান—জানান, এখন গাছের সংখ্যা কমে গেছে। তাঁরা প্রত্যেকে ২০ থেকে ৩০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রতিটি গাছের জন্য মালিককে দিতে হয় ৭ কেজি গুড় বা ১ হাজার টাকা।

কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “খেজুর গাছের তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি বাড়ির আশপাশ ও রাস্তার ধারে খেজুর গাছ লাগাতে। পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর বাগান গড়ে তুললে কৃষকেরা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাবেন।”

গ্রামীণ জনপদে শীত মানেই খেজুর রসের হাঁড়ি হাতে গাছিদের ব্যস্ত সকাল, আর গুড়ের মিষ্টি ঘ্রাণে ভরা পাড়া-প্রতিবেশ। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এই গাছিরাই যেন নতুন করে জীবনের সুর তোলে।