পটুয়াখালীর বাউফলের নুরাইনপুর বাজার। প্রতিদিন সকালবেলা বাজার জমে ওঠে, চারদিকে মানুষের কোলাহল, ডাকাডাকি, দরদাম। কিন্তু এই ভিড়ের মাঝেই আছে এক শান্ত দৃশ্য—একটি সাদা বক দোকানের সামনে নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে থাকে, মাঝে মাঝে দোকানের ভেতরে ঢুকে দোকানদার মো. হেমায়েত উদ্দিনের পাশে এসে বসে পড়ে। যেন বহু বছরের সঙ্গী, কিংবা পরিবারেরই কেউ।
হেমায়েত উদ্দিন নুরাইনপুর গ্রামের বাসিন্দা। চার বছর ধরে বাজারের মসজিদের সামনে তাঁর ছোট স্টেশনারি দোকান। গত চার মাস ধরে এই দোকানেই আশ্রয় নিয়েছে একটি সাদা বক—যাকে তিনি এখন নিজের সন্তানের মতোই দেখেন।
ঘটনার শুরু এক ঝড়ের দিনে। বাজারসংলগ্ন খানবাড়ির বিশাল গাছে ছিল একটি বকের বাসা, স্থানীয়ভাবে যেটি পরিচিত ‘বকের বাড়ি’ নামে। ঝড়ে উড়ে গিয়ে নিচে পড়ে যায় একটি ছোট বকছানা। তখনই একটি গুইসাপ এসে সেটিকে আক্রমণ করতে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে এগিয়ে আসেন হেমায়েত উদ্দিন। আহত ছানাটিকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসেন নিজের দোকানে। তারপর যত্ন, সেবা আর ভালোবাসায় তাকে আবার জীবনের আলোয় ফেরান তিনি।
এখন সেই বকটি দোকানের নিয়মিত বাসিন্দা। কখনও ছাউনিতে বসে থাকে, কখনও দোকানের চেয়ারের হাতলে। বাজারের ভিড়, শব্দ বা মানুষের আনাগোনায় কোনো ভয় নেই তার। দোকানের কিছু নষ্ট করে না, এমনকি নির্দিষ্ট জায়গায় মলত্যাগ করে—যেন শৃঙ্খলা জানা কোনো পরিবারের সদস্য।
হেমায়েত উদ্দিন বলেন, “ওকে কখনও বেঁধে রাখিনি। সব সময় দোকানের আশপাশেই থাকে। ক্ষুধা পেলে টুপি ধরে খুনসুটি করে—তখন বুঝি মাছ দিতে হবে। ছোট মাছ কিনে ফ্রিজে রাখি, পরে খাওয়াই। কখনও জাল ফেলে নিজেই মাছ ধরে আনি। অসুস্থ হলে নাপা ট্যাবলেট দিই, তাতে ভালো হয়ে যায়। শিশুর মতোই যত্ন নিতে হয়।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. খলিল বলেন, “মানুষ আর বকের এমন বন্ধুত্ব আগে কখনও দেখিনি। প্রতিদিন বাজারে এলেই দেখা যায় ওদের দু’জনকে পাশাপাশি বসে থাকতে। সত্যিই অবাক হওয়ার মতো।”
স্থানীয়রা বলেন, হেমায়েত অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। বক থাকে গাছের মাথায় কিন্তু এখন দেখছি মানুষের বন্ধু। এটা খুবই ভালো লাগছে। হেমায়েতকে ধন্যবাদ।
একটি ঝড়ে পড়ে যাওয়া অসহায় প্রাণকে বাঁচিয়ে আজ বন্ধুত্বে বেঁধেছেন হেমায়েত। নুরাইনপুর বাজারের এই বকটি যেন এখন শুধু একটি পাখি নয়—মানবতার এক নীরব প্রতীক।




Comments