Image description

ভালোবাসা যে ভাষা, দেশ, ধর্ম বা বর্ণের সীমানায় বাঁধা পড়ে না—তা আবারও প্রমাণ করলেন চীনের হুনান শহরের যুবক চেং নাং ও বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের বিয়ারা গ্রামের মেয়ে অন্তরা খাতুন।

চেং নাং বন্ধুর সঙ্গে ভ্রমণে বাংলাদেশে এসেছিলেন, কিন্তু ফেরার সময় শুধু স্মৃতি নয়—বাংলাদেশ থেকেই খুঁজে পেলেন জীবনের ভালোবাসা।

অন্তরা খাতুন—এক সংগ্রামী নারী। 
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নয় বছরের মেয়েকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কাজ করতেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। একদিন মেয়েকে নিয়ে এক রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে ভাগ্যের লিখনে সেখানে দেখা হয় চীনা যুবক চেং নাংয়ের সঙ্গে।
হাসি-আলাপে শুরু হয় বন্ধুত্ব, তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ। ভাষা ভিন্ন হলেও হৃদয়ের কথা বুঝতে কোনো অনুবাদ প্রয়োজন হয়নি তাদের।

চেং নাং জানতে পারেন অন্তরা ডিভোর্সি এবং তার একটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু প্রেম তো পরিমাপ করে না সামাজিক পরিচয় দিয়ে।
বরং চেং আরও দৃঢ় হন অন্তরাকে জীবনসঙ্গী করার সিদ্ধান্তে। দুই দেশের পরিবারেই হয় আলোচনা। অবশেষে পরিবারের সম্মতিতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গত ২২ অক্টোবর গাজীপুর কোর্টচত্বরে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন তারা।

বিয়ের পর অন্তরা স্বামী চেং নাংকে নিয়ে ফিরে আসেন নিজের বাড়ি, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পৌর এলাকার বিয়ারা গ্রামে।
গ্রামের মানুষ এখনো বিশ্বাস করতে পারে না—তাদের প্রতিবেশী মেয়ের জামাই একজন চীনা নাগরিক!

প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে কৌতূহলী মানুষ ভিড় করছে শুধু একনজর দেখতে ‘বিদেশি জামাই’কে। কেউ কথা বলতে চায়, কেউ আবার ছবি তুলতে ব্যস্ত।

অন্তরার বাবা-মা বলেন,“প্রথমে একটু ভয় লাগছিল, মেয়ে ভিনদেশি ছেলের সঙ্গে কেমন সংসার করবে। কিন্তু এখন দেখি ওরা দুজন খুব সুখে আছে। মেয়ের মুখে হাসি দেখলেই মনে হয়, সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল।”

চীনের হুনান শহর থেকে বাংলাদেশে আসা এই তরুণ বলেন,“অন্তরাকে প্রথম দেখেই আমার মনে হয়েছিল, এটাই সেই মানুষ যাকে আমি খুঁজছিলাম। তার অতীত নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি অন্তরাকে যেমন, তেমনভাবেই ভালোবাসি। এখন ভিসার কাজ চলছে—সব ঠিক হলে ওকে নিয়ে চীনে ফিরে যাব।”

চেং নাং এখন গ্রামের সবার প্রিয় মানুষ। স্থানীয়রা বলেন, তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও পরিশ্রমী। স্থানীয় খাবারও তিনি আগ্রহ নিয়ে শিখছেন, এমনকি কিছু বাংলা শব্দও বলতে পারেন—“ভালোবাসি”, “ধন্যবাদ”, “চা খাবেন”।  

চেং নাং ও অন্তরার গল্প যেন এক জীবন্ত বার্তা—
ভালোবাসা যখন সত্য হয়, তখন তা সব সীমানা, ভাষা আর সংস্কৃতির দেয়াল ভেঙে দেয়।