Image description

ইরাক যুদ্ধের পেছনে মূল ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) তার পরিবারের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, চেনি নিউমোনিয়া ও হৃদ্‌যন্ত্র ও রক্তনালিজনিত জটিলতায় মারা গেছেন।

তার পরিবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‌‘দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ডিক চেনি আমাদের জাতির সেবা করেছেন-হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ, ওয়াইওমিংয়ের কংগ্রেসম্যান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। আমাদের দেশের জন্য তার অবদানের প্রতি আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।’

রিপাবলিকান নেতা চেনি ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ভাইস প্রেসিডেন্টদের একজন হিসেবে দেখা হয়। তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৯ সালে, রিচার্ড নিকসনের প্রশাসনে ডোনাল্ড রামসফেল্ডের সহযোগী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে।

ডিক চেনি ছিলেন ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী। তিনি দাবি করেছিলেন, সাদ্দাম হোসেনের ইরাকের কাছে ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দেশটি হুমকি হয়ে উঠছে। সেই যুদ্ধে ইরাক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটে। কিন্তু গণবিধ্বংসী কোনো অস্ত্রের অস্তিত্ব আর পাওয়া যায়নি।

এর আগে, ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত জর্জ বুশ সিনিয়রের অধীনে প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৭০ এর দশকে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন চেনি। পরে এক দশক তিনি হাউজ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

৯/১১–এর হামলার পর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণার একজন মূল কারিগর চেনি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর চেনি মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে ‘শাসন পরিবর্তন’–এর আহ্বান জানান, যাতে যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়।

তিনি প্রণয়ন করেন তথাকথিত ‘ওয়ান পারসেন্ট ডকট্রিন’ বা ‘চেনি ডকট্রিন’, যেখানে বলা হয়—যদি কোনো সম্ভাব্য হুমকি মাত্র এক শতাংশও থাকে, তবুও যুক্তরাষ্ট্রকে আগাম হামলা চালাতে হবে।

চেনি ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডনাল্ড রামসফেল্ড ২০০৩ সালের মার্চে ইরাকে হামলা চালানোর জন্য সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছিলেন।

তিনি দাবি করেছিলেন, ইরাকের সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার যোগাযোগ রয়েছে এবং ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের টুইন টাওয়ারে হামলার সঙ্গে তাদের যোগ থাকতে পারে যা পরে তদন্তে অসত্য প্রমাণিত হয়েছিল।

চেনি মনে করেছিলেন, মার্কিন সেনাদের ইরাকে ‘মুক্তিদাতা হিসেবে অভিনন্দন জানানো হবে’ এবং যুদ্ধ ‘কয়েক সপ্তাহেই শেষ হবে।’ কিন্তু স্তবে সেই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় এক দশক এবং প্রাণহানিও ব্যাপক হয়েছিল।

ইরাকে কোনও গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া না গেলেও চেনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, ওই সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইরাকে আগ্রাসন চালানো এবং তৎকালীন ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরানো সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।