মিয়ানমারে সামরিক শাসনের অধীনে নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। এর আগে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে প্রহসন বলছেন। কিন্তু প্রতিবেশী চীন যেন এই নির্বাচনের উৎসাহী সমর্থক হিসেবে হাজির হয়েছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও পিছু হটার সমঝোতা করাতে বেইজিংয়ের মধ্যস্থতা সংঘাতের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। এর ফলে নির্বাচনের আগে জান্তা সরকারের অবস্থানও শক্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, একসময় বিরোধী পক্ষগুলোকে সমর্থন দিলেও এখন চীন সামরিক সরকার ও তাদের নির্বাচনে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। এর পেছনে মিয়ানমারে নিজেদের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা- এমনকি দেশটির নেতৃত্ব পুনর্গঠনে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যও থাকতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের লাশিও শহর একসময় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই শহর দখলকে তাদের সাফল্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপে তা আবার জান্তার নিয়ন্ত্রণে ফিরে যায়। লাশিও শহরের এক বাসিন্দা (৩০) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা অনেকটা পারিবারিক বিষয়ে বাইরের কারো নাক গলানোর মতো ব্যাপার।
প্রায় পাঁচ বছর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়। তারা অং সান সু চিকে আটক করে। অভিযোগ তোলে, নির্বাচনে ভোট কারচুপির মাধ্যমে সু চি জয় পেয়েছিলেন। এ ঘটনার পর গণতন্ত্রপন্থী কর্মীরা অস্ত্র হাতে তুলে নেন। তারা জাতিগত সংখ্যালঘু বাহিনীর সঙ্গে একযোগে লড়াই শুরু করে।
সামরিক অভ্যুত্থানের শুরুতে চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল সংযত। তবে চীন-মিয়ানমার সীমান্তে অনলাইন প্রতারণা কেন্দ্র ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি বদলে যায়। প্রতারণার কেন্দ্রগুলোর ফাঁদে পড়েন অনেক চীনা নাগরিক। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই প্রতারণা দমনে জান্তা সরকারের ব্যর্থতা বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। পরে তারা বিদ্রোহীদের একটি যৌথ পক্ষকে সমর্থন দেয়।
জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু তিনটি বাহিনীর জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে লাশিওসহ একাধিক এলাকায় নাটকীয়ভাবে সাফল্য পায়। লাশিও দখল ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি ছিল একটি আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের কেন্দ্র।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক মর্গান মাইকেলস বলেন, বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তখনই বেইজিং ‘ব্রেক কষে’ পরিস্থিতি থামায়। এএফপিকে মর্গান মাইকেলস বলেন, বেইজিংয়ের নীতি হলো রাষ্ট্র ভেঙে পড়তে দেওয়া যাবে না। তাদের যখন মনে হলো- মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ভেঙে পড়তে পারে, তখনই তারা বিদ্রোহীদের ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করে।




Comments