বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়ার জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে একটি দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তার মৃত্যুর পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন শোকের ছায়া নেমেছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও তার রাজনৈতিক দর্শন ও সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে তার শাসনামলে নেওয়া বিভিন্ন সাহসী ও দেশপ্রেমিক পদক্ষেপের কথা বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-র এক প্রতিবেদনে খালেদা জিয়াকে এমন একজন নেত্রী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যিনি সবসময় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে অন্য সবকিছুর উপরে স্থান দিতেন। প্রতিবেদনে তার শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তার নেওয়া প্রধান পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে:
খালেদা জিয়া গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোচ্চার ছিলেন। তিনি ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জাতিসংঘ এবং ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরেন। তিনি ভারতকে চাপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে নিরলস কাজ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে চীন ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দেন। ২০০২ সালে তার শাসনামলে চীনের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নে চীন বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ পায়।
১৯৯২ সালে ভারত সফরকালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও যখন বাংলাদেশে থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলেন, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়ভাবে তার প্রতিবাদ করেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “ভারতে বাংলা ভাষাভাষী থাকা মানেই তারা বাংলাদেশি নয়।” তার এই সাহসী উত্তর সে সময় ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহের জন্য ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার তীব্র বিরোধী ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি মনে করতেন, বিনাশুল্কে বা দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে ভারতকে এমন সুবিধা দেওয়া ‘দাসত্বের’ শামিল। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি তার শাসনামলে কোনো ধরনের ট্রানজিট সুবিধা দেননি।
ইন্ডিয়া টুডে আরও উল্লেখ করে যে, স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর শক্ত হাতে বিএনপির হাল ধরা খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন। ২০০১ সালের মেয়াদে তিনি সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান প্রদর্শন করেন।
খালেদা জিয়ার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক সফর শেষ হলেও, জাতীয় স্বার্থে তার নেওয়া এসব কঠোর ও আলোচিত সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে তাকে দীর্ঘকাল স্মরণীয় করে রাখবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
মানবকন্ঠ/আরআই




Comments