শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। তবে এর প্রভাবে মুখের ভেতরের সংবেদনশীল অংশেও দেখা দেয় তীব্র অস্বস্তি। ঠোঁট ফাটা, ঠোঁটের কোণে ঘা হওয়া, কিংবা মুখ ও জিহ্বায় ছোট ছোট সাদা বা লালচে ঘা (অ্যাপথাস আলসার বা ক্যানকার সোর) এতটাই বাড়তে পারে যে, ঝাল বা মশলাদার খাবার তো দূরে থাক, পানি পান করাও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে।
কেন শীতে এই সমস্যা বাড়ে এবং এর ঘরোয়া প্রতিকার কী চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কেন হয় এই সমস্যা?
শীতকালে মুখের এই সমস্যাগুলো বেড়ে যাওয়ার পেছনে শারীরিক ও খাদ্যাভ্যাসগত কিছু পরিবর্তন মূল ভূমিকা পালন করে। যেমন-
১. পানির অভাব বা ডিহাইড্রেশন: শীতে তৃষ্ণা কম অনুভূত হওয়ায় আমরা পানি কম পান করি। শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে মুখের লালা গ্রন্থি শুকিয়ে যায়, যা শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে (মিউকাস মেমব্রেন) ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মুখে ঘা সৃষ্টি করে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: শীতে সর্দি-কাশি ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে ঘা বা আলসার তৈরি করে।
৩. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন: শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে অনেকে অতিরিক্ত ঝাল, তেল ও মশলাযুক্ত খাবার খান। এ ধরনের খাবার পেটের সমস্যা তৈরির পাশাপাশি মুখের সংবেদনশীল ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ঘা হওয়ার অন্যতম কারণ।
৪. ভিটামিনের অভাব: শীতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে শরীরে ভিটামিন বি-১২, আয়রন, জিংক বা ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা মুখে ঘা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
প্রতিকার ও দ্রুত সুস্থ হওয়ার ঘরোয়া উপায়
সাধারণত মুখের আলসার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে ব্যথা কমাতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে:
পর্যাপ্ত পানি পান: শীতেও প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। শরীর হাইড্রেটেড বা আর্দ্র থাকলে মুখের লালা নিঃসরণ স্বাভাবিক থাকে এবং ঘা দ্রুত শুকিয়ে যায়।
লবণ-পানির গার্গল: হালকা গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার কুলকুচি করুন। এটি মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ঘা শুকাতে সাহায্য করে।
মধু ও হলুদের ব্যবহার: এক চিমটি কাঁচা হলুদের গুঁড়োর সঙ্গে অল্প মধু মিশিয়ে ঘায়ের ওপর লাগান। মধু ও হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
গ্লিসারিন বা নারকেল তেল: ব্যথার জায়গায় গ্লিসারিন বা নারকেল তেল লাগিয়ে রাখুন। এতে স্থানের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং জ্বালাপোড়া কমে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদি আলসার দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, আকারে বাড়তে থাকে, অথবা এর সঙ্গে জ্বর ও তীব্র ব্যথা থাকে; তবে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।




Comments