নিশু বাড়ির পাশের সরকারি প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। শ্রেণি রোল এক হওয়ায় সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। যেমন মেধায় তেমনই বুদ্ধিমত্তায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সে সেলিব্রিটি। নিশুর বাবা তার নামে একটা পার্সোনাল পেজ খুলে তার বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ আপলোড দিতে থাকে। আর করোনাকালীন সময়ে সেই ফেসবুক পেজ ভাইরাল হয়ে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। যদিও সে এতে নির্বিকার। সেলিব্রিটি কিংবা ভাইরাল কি সে ওসব বোঝে না। তার বোঝার বয়সও হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ফেসবুক একাউন্ট তার বাবা পরিচালনা করে।
স্কুলে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের একটা করে গাছ দেয়া হয়। যা বাড়ির উঠানে একপাশে লাগাতে বলা হয়। তার আগে সরকারিভাবে পাওয়া গাছ স্কুলের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান উদ্বোধন করেন। সাথে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। গাছ বিতরণের সময় চেয়ারম্যান তাকে সময় দিয়ে একাধিক ছবি তুলতে ইশারা করে। নিশু প্রথমে দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গেলেও সেই ভয় কেটে যায়।
বেশ খুশি মনে বাড়ি ছুটে আসে। ঘরে বইপত্র রেখে গাছ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। স্থান নির্বাচনের জন্য বেশ ভাবনায় পড়ে যায়। বিষয়টি তার মা ও দাদু দেখে মিটিমিটি হাসে। কিছু বলে না। আর নিশুর মা দাদু কিছুক্ষণের জন্য শৈশবের স্মৃতিচারণে মেতে ওঠে। নিশুর সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই।
স্থান নির্বাচন করে নিশু যায় দা আনতে। তার মা তাকে দা না নিয়ে খুন্তি নিয়ে যেতে বলে। নিশু মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে। কেউ কাউকে কিছু না বললেও যে যারযার চোখের ভাষা পড়ে নিতে পারে। নিশুর মা মেয়ের অজান্তে ক্যামেরা ওপেন করে ভিডিও করতে থাকে। নিশু বুঝতে পারে না। নিশু গাছ লাগিয়ে মাটি ভরে পানি আনতে চলে যায়। ছোট মগে করে পানি এনে গাছের গোড়ায় দিয়ে কিছু পানি গাছের গায়েও ছিটিয়ে দেয়। এতে নিশুর আনন্দ আর ধরে না।
প্রতিদিন নিশু বিকালবেলা নিয়ম করে পানি দেয় গাছে। বিশেষত স্কুল ছুটি হলে। আর বন্ধের দিন ওই একই সময়ে পানি দেয়। বিপত্তি বাধে যদি নানু বাড়ি বেড়াতে যায়।
ভয়ে ভয়ে দাদুকে বলে- দাদু দাদু আমার না তোমার জন্য বেশ খারাপ লাগবে।
দাদু বলে- তো! এখন আমাকেও যেতে হবে সাথে?
নিশু- আরে না দাদু! বলছিলাম কি গাছটার জন্যও খারাপ লাগছে।
দাদু- কিচ্ছু হবে না দাদুভাই আমি তোমার গাছ দেখে রাখব।
নিশু- দাদু আমি তা বলছি না!
দাদু- কি বলছো তাহলে?
নিশু- পানি ছাড়া তো গাছ বাঁচে না!
দাদু- সে তো আমি জানি!
নিশু- আমার প্রিয় দাদু বলে জড়িয়ে ধরে মুখে চুমু দেয়। আর তীব্র জোরে দাদুকে ঝাপটে ধরে। দাদু বলে হয়েছে হয়েছে আর আহ্লাদ দেখাতে হবে না। তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমারও ভালো লাগে না। তাড়াতাড়ি চলে এসো। নিশু বলে- আচ্ছা দাদু নিজের খেয়াল রেখো।
নিশু আর দাদুর বন্ডিং বেশ ভালো জমে।
দেখতে দেখতে গাছটা বেশ বড় হয়েছে। একটা অজানা ফুলের গাছ। অনেক ফুল ধরেছে। সুবাসও বেশ! তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে একই গাছ অথচ নানান রঙের ফুল। নিশু দেখে খুশি হয়। তবে চিন্তায় পড়ে যায় এ আবার কেমন ফুল! লাল সাদা গোলাপি কমলা আকাশি বেগুনি নীল সবুজ কালো। এত রঙের ফুল দেখে সে আত্মহারা হয়। বিকালবেলা অনেক প্রজাপতি এসে ফুলে বসে।
প্রজাপতিগুলোও বেশ বাহারি রঙের। একটু বাতাস এলেই ফুল শোভিত গাছ দুলে। নিশুর আনন্দ যেন আরও বেড়ে যায়।
একদিন নিশু গাছের কাছাকাছি যেতেই একটা অদ্ভুত আওয়াজ কানে আসে। নিশু কিছুটা ঘাবড়ে এদিক সেদিক তাকায়। কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার গাছের দিকে তাকায়। গোলাপি রঙের ফুলটা তাকে বলছে ওরা আমাকে মেরে ফেলতে চায়। নিশু গোলাপি রঙের ফুলটার কথার কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
সাত পাঁচ না ভেবে ফুলের গায়ে হাত দিয়ে ধরতেই ফুলটি ঝরে পড়ে! নিশু কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। মানে কি? গোলাপি ফুলটা ঝরে গেল কেন? ফুলটা হাতে নিতেই আরো জোরে চিৎকার করে বলে ওঠে আমি বলেছি ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। তুমি শুনলে না। এখন দেখলে?
নিশু কথা বলতে যায় কথা বলতে পারে না। হাত পা নাড়তে থাকে। লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গলায় হাত দেয় বারবার। মা নিশুর এমন অবস্থা দেখে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে পানি নিয়ে এসে ধীরে ধীরে খেতে বলে। বুঝতে পারে মেয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছে।
নিশু পানি পান করে মায়ের হাতে গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বলে জানো মা? আমি যে চারাটা লাগিয়েছিলাম তার গোলাপি রঙের ফুলটা না মরে গেছে। মা চিন্তা করে কিসের ফুল গাছ কখন লাগালো?
পাশের রুম থেকে গোঙানির শব্দ আসতে আসতে জোরে শব্দ করে মিলিয়ে যায়। নিশুর মা শাশুড়ির রুমে গিয়ে দেখতে পায় বৃদ্ধ নছিমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।
মানবকণ্ঠ/এফআই
Comments