অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভা নভেম্বরেই শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে নিজের মন্ত্রণালয়ের সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “সংস্কার কমিশন থেকে ২৩টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব তোলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে ১৩টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন করছে। নভেম্বরে কেবিনেট ক্লোজ হয়ে যাবে, যা করার আগামী মাসের মধ্যে করতে চাই।”
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ভূমিকায় চেয়েছে বিএনপি। এরপর তথ্য উপদেষ্টার কাছ থেকে সরকারের ধরন পরিবর্তনের এ আভাস মিলল।
মাহফুজ আলম বলেন, “ওয়ান হাউজ, ওয়ান মিডিয়া পলিসি, সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন অচিরেই কেবিনেটে তুলতে পারব। অনলাইন পোর্টালের জন্য নীতিমালা করে রেখে যাব। যেসব পত্রিকা ছাপা হয় না, ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
বেসরকারি টেলিভিশন নিয়ে কোনো আইন নেই স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “টিভির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকদের। তারা এখনও এগুলোর মালিক হিসেবে আছে। বিদেশে বসে বসে লাভের হিসাব গুনছে।”
ওটিটি নিয়ে আইসিটি বিভাগের সঙ্গে কথা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কনটেন্ট নির্মাণ করলে সেটা তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায়। আর ডিজিটাল প্লাটফর্মে পাবলিশড করলে সেটা আইসিটি বিভাগের দেখভালে চলে যাবে। অনলাইন প্লাটফর্মে যে কনটেন্ট আসে, সেগুলোকে রেগুলেট করার চেষ্টা করছি। ইউটিউবে কোনো কনটেন্ট পাবলিশ করলে সেটা যদি আয় করে, তাহলে সেটাকে রেগুলেশনের আওতায় আনা হবে।”
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করে দেওয়া হবে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, অন্তত নবম গ্রেডের কাছাকাছি যেন বেতন হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
“আমি গণমাধ্যমের সক্ষমতা বাড়াতে প্রচার সংখ্যা কমিয়ে বিজ্ঞাপনের হার বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু প্রচার সংখ্যার সঠিক তথ্যটা আসতে হবে। স্থানীয় পত্রিকার প্রচার সংখ্যা, ইংরেজি পত্রিকার প্রচার সংখ্যা কমিয়ে দেব। কেন আমরা এগুলো করব? আমরা সাংবাদিকদের একটা বেসিক সেলারি প্রস্তাব করে যেতে চাই। যারা সুবিধা দিতে পারবে না, তারা এসব সুবিধা পাবে না।”
নবম ওয়েজ বোর্ড নিয়ে নোয়াব ও পত্রিকা মালিকদের সঙ্গে গত এক বছরে তিনবার বসে চেষ্টা করেছেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। মালিকরা রাজি না হলে বিজ্ঞাপনের হার কমিয়ে দেব। যারা প্রতিযোগিতায় মাঠে থাকতে পারবে না, তারা চলে যাবে।”
অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “ডিসেন্ট বেতন যেন সাংবাদিকরা পান, সেজন্য বলে আসছেন তথ্য উপদেষ্টা। বেতনের সমস্যার কারণে আমরা ইউনিয়ন লিডারদের কাছে যাই। তারা আমাদের সেরের দরে বিক্রি করে। গুলশান বনানীতে নিজেদের বাড়ির মালিকানা পায়।”
ব্যঙের ছাতার মতো শত শত নিউজ পোর্টাল রয়েছে মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, “যারা অন্যের আর্টিকেল চুরি করে। এদের বিরুদ্ধে কিছু করলে বলে যে গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ। সরকার ইথিকাল জার্নালিজম দেখতে চায়। কেউ যেন কপি না করে। ভালো জার্নালিজমে যারা বিনিয়োগ করে, সেটা প্রটেক্ট করা সরকারের দায়িত্ব।”
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমদ, ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।




Comments