Image description

রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনি এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও স্থানীয় শহীদ মিনারগুলোতে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

সাভার ও ঢাকা বিভাগ

ভোরের আলো ফোটার আগেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

গাজীপুরে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, মহানগর বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী পৃথক কর্মসূচি পালন করে। মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য বিজয় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির আয়োজন করে ‘রান ফর ভিক্টরি’ ম্যারাথন। ঢাকার ধামরাইয়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৬৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মানিকগঞ্জে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও বিজয় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, মাদারীপুরের রাজৈর, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, ফরিদপুরের সালথা এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। নারায়ণগঞ্জের কেরানীগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, চন্দনাইশ ও আনোয়ারায় কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয়। আনোয়ারায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির উদ্যোগে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান হুমাম কাদের চৌধুরী।

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে উৎসবমুখর পরিবেশে দিবসটি পালিত হয়। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানায় বিজিবি। খাগড়াছড়ির বাঘাইছড়িতে তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও জেলা সদর, কুমিল্লার মুরাদনগরে এবং ফেনীর পরশুরামে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ

রাজশাহীতে সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে), পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘায় নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়। নওগাঁর মান্দা ও বদলগাছীতে প্রশাসন ও বিএনপির উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। নাটোরে বড়াইগ্রাম ও সিংড়ায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিজয় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও কাজিপুরে প্রশাসন ও বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণে শ্রদ্ধা নিবেদন ও কুচকাওয়াজ হয়। পাবনার আটঘরিয়ায় এবং বগুড়ার মোকামতলায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রংপুর বিভাগের নীলফামারীর ডিমলা, সৈয়দপুর ও জেলা সদরে কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। কুড়িগ্রামের উলিপুরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটি শুরু হয় এবং বিজয় মেলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

খুলনা ও বরিশাল বিভাগ

খুলনার পাইকগাছা ও দাকোপে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়। কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসনের তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি এবং চুয়াডাঙ্গায় বিজয় মেলা ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুরে কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা কুশিয়ারা’। বাউফলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে বিশাল বিজয় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। ভোলায় বোরহানউদ্দিনে দিনব্যাপী বিজয় মেলা ও ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয়।

সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ

সিলেটের সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ ও জামালগঞ্জে কুচকাওয়াজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আলোচনা সভা ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। হবিগঞ্জের মাধবপুরে তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে দিনব্যাপী বিজয় মেলা ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। মুক্তাগাছায় বিএনপি বিজয় র‍্যালি বের করে। নেত্রকোনার বারহাট্টা এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়।

সারা দেশে এসব কর্মসূচিতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভাগুলোতে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।