Image description

সুযোগের অভাবে সবাই যখন নীতিবান ও দেশপ্রেমিক! বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের একমাত্র অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি এখন বাঙালির সংস্কৃতির অংশ হিসেবে নিজের অস্তিত্ব তৈরি করেছে। যার ক্ষমতায় যতটুকু দুর্নীতি করা সম্ভব সে তার সবটুকু করছে। এ দেশে দেশপ্রেমিকের নামে ভণ্ডামি এখন অহরহ। স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসেও দেশের অর্থনীতি বা অবকাঠামোগত তেমন উন্নয়ন চোখে পড়ে না। সবাই দলীয় ক্ষমতার ছায়ায় হাজার হাজার কোটি লুট করেছে। 

দেশের মানুষের ভাগ্য এই ভণ্ড দেশপ্রেমিকরা শূন্যে তুলে নিলাম করেছে। কোথায় নেই দুর্নীতি! সরিষার ভেতরের ভূত তাড়ানো অসম্ভব আমরা জানি কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দুর্নীতি দূর করাও কি অসম্ভব? যদি তাই হয় তাহলে এ কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে সবার আগে। কেন তারা পুকুরচুরি ধরতে পারে না, নাকি ধরতে চাই না? 

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন বলেছেন, ছোট দুর্নীতি হলে আমরা আগে খবর পাই। কিন্তু সমঝোতার মাধ্যমে যে দুর্নীতি হয়, অর্থাৎ বড় দুর্নীতি, সেটার অভিযোগই হয় না। তাহলে যে সমঝোতা করছে তাকে ধরছেন না কেন? তিনি বলেন, ঠিকাদার, দপ্তর প্রধান কিংবা সাংবাদিক খবর দেন না। যদিও প্রত্যেক জেলায় তাদের কার্যালয় নেই। এটা সত্যি, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির সম্মুখীন হই, সেটা কমাবো কীভাবে, তা বড় প্রশ্ন? কিন্তু এ প্রশ্ন তো জনগণের, আপনারা পারবেন কীভাবে তা কি জনগণ বলবে? তাহলে তারা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বা করছেন তা সবার জানা দরকার বলে আমি মনে করি।
 
প্রধান উপদেষ্টার গতকালের ভাষণের বড় একটা অংশ ছিল দুর্নীতি। কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সবচেয়ে বড় বার্তা ছিল পেছনের দুর্নীতি দমনের চেয়ে, সামনে যেন দুর্নীতি না হয়। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বর্তমানের দুর্নীতি যেন বন্ধ করতে পারি, পুরনোগুলোর তদন্ত ও বিচারকাজ অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারি। দুদক মূলত ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সময় ব্যয় করে পুরনো দুর্নীতি নিয়ে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, পুরনো দুর্নীতি নিয়ে ২০ শতাংশ, বর্তমানের দুর্নীতি নিয়ে ৩০ শতাংশ এবং ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য ৫০ শতাংশ ব্যয় করা উচিত। আমরা এই নির্দেশনা গ্রহণ করেছি। ওই নির্দেশনা জেলা প্রশাসককেও দিয়েছি।

বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দল ও তার নেতারা দূর্নীতি করছে প্রশাসন নিরব দর্শক কিন্তু কেন?  কে বা কারা ইন্দন দিচ্ছে? কিছু স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে কিন্তু তারা তা পরিষ্কার করেনি দেশ ও মানুষের কাছে। তাহলে তো সে কথায় সত্য যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ। বৈষম্য দূর করতে যে বিপ্লব ও বিপ্লবীদের হাতে দেশ চালানোর দায়িত্ব অর্পণ করা হলে তারাই কি নতুন করে বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতি করছে? নতুন নেতাদের বিলাসী জীবন ও ভ্রমণ খরচ যোগান কোথা থেকে? এ প্রশ্ন করতে হবে এবং যৌক্তিক তথ্য প্রমাণ চাইতে হবে। চারদিকে খুন ছিনতাই ধর্ষণ ভরে গেছে! ধর্ষকের হাতে কলঙ্কিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা!

চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী বিপ্লবীদের মনোনীত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি যে প্রত্যাশা ছিল সর্বস্তরের মানুষের তার অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার দৃশ্যপট চিত্রিত হচ্ছে। ’৭১-এর হায়না হানাদার এর চারায় পূর্ণ হচ্ছে আমার বাংলাদেশের মানচিত্র! উলঙ্গ করে তুলছে দেশের স্বাধীনতাকে এ দেশেরই নব্য হায়না হানাদার। নারী ধর্ষণ মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার হত্যা। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিপরীতে মানবাধিকার লঙ্ঘন এর নামে চলমান ধর্ষণের উৎসাহ! উক্ত পরিস্থিতির জন্য দায়ী দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও সংবিধান। পুরো বাংলাদেশ বর্তমান সরকারের পক্ষে তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের ভয় বা বাধা কিসে?  

নাকি টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশের মানুষের জীবন অপরাধীর কাছে? স্পট উত্তর দিতে হবে জাতীর সামনে তাদের সীমাবদ্ধতা কোথায়? নাকি, ক্ষমতার আগে যত নীতি, ক্ষমতা পেলেই তার শতগুণ দুর্নীতি! দেশে শিক্ষিত, ভদ্র, মেধাবী ও ভণ্ড দেশপ্রেমিক চোরে ভরপুর! এ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই নানা দুর্নীতিতে আক্রান্ত, এরা  জাতিকে কিছু শিক্ষিত মেধাবী দুর্নীতিবাজ তৈরি করছে যারা দেশের সম্পদগুলো নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। এ দেশে রাজনীতি তো করেই দেশের মানচিত্র কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে। অফিস ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। মন্ত্রণালয়গুলো বাৎসরিক জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলো দলীয়মুক্ত করে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে নিয়মিত। তাদের জন্যে কিছু নির্দিষ্ট আইন প্রয়োগ ও পুরষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। 

আসুন দেশ, মাটি ও মানুষকে ভালোবাসি। কারণ চোখ দুটো বন্ধ হলে শূন্য হাতে বিদায় হবে আর এই মাটিতেই থাকতে হবে। তাই মাটির সাথে বেইমানি না করি, সবাই যার যার অবস্থান থেকে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করি। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট