নিউইয়র্কে আখতারের ওপর হামলা: নিরাপত্তায় ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের বিচার চায় এনসিপি

নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে এনসিপি। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপত্তায় ব্যর্থ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি তুলেছে দলটি। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই দাবিগুলো উপস্থাপন করেন।
হামলার ধারাবাহিকতা ও সরকারের দায়
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ও লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার ধারাবাহিকতায় নিউইয়র্কে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে। তিনি বলেন, “অতীতের ঘটনায় সরকার পদক্ষেপ নিলে বারবার এমন ঘটনা ঘটত না। প্রতিটি হামলার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আওয়ামী লীগ যেভাবে সাইবার হামলা চালাচ্ছে, তাতেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “লন্ডনে মাহফুজ আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির নাম প্রকাশ করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণ করতে হবে। এই হামলার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিস্তারিত জানতে চাইব।”
নিউইয়র্কে হামলার বিবরণ
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের কেনেডি বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় এনসিপি নেতা আখতার হোসেন ও তাসনিম জারার ওপর হামলা হয়। এ সময় আখতারের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়।
জুলাই গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগের তৎপরতা
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই গণহত্যার বিচার স্বচ্ছ ও ত্বরান্বিত করতে হবে। দল হিসেবে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে এখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়নি। আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানাব, যাতে আওয়ামী লীগের জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৫ বছরের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড তদন্ত করে বিচার শুরু হয়।”
তিনি আরও বলেন, “পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জবাবদিহিতা চাইব। কেন বারবার দেশের বাইরে এমন ঘটনা ঘটছে? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিবাদী আমলে নিয়োগপ্রাপ্তরা এখনো কেন রয়ে গেছে? আমাদের বিদেশি দূতাবাসগুলো কেন রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং কেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী তৎপরতা বন্ধ করতে পারছে না?”
আওয়ামী লীগের চলমান তৎপরতা
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ দেশে-বিদেশে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল করা, গণঅভ্যুত্থানের নেতা, শহীদ পরিবার ও আহতদের লক্ষ্য করে আক্রমণ, সাইবার জগতে নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো—এসবই চলমান রয়েছে। এই হামলা তারই ধারাবাহিকতা।”
তিনি বলেন, “বিচারে দুর্বলতার কারণে আওয়ামী লীগ এত তৎপরতার সুযোগ পাচ্ছে। সাধারণ কোর্টে মামলায় জামিন দেওয়া হচ্ছে, আসামিরা পালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকেরা ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে, শহীদ পরিবার ও আহতদের হুমকি দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় হামলার ঘটনা ঘটছে, এখন দেশের বাইরেও এমন ঘটনা দেখা যাচ্ছে।”
বিক্ষোভের ঘোষণা
এনসিপির আহ্বায়ক জানান, “সরকারের সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত ও অপসারণ করতে হবে। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নিউইয়র্কে হামলার প্রতিবাদে আজ বিকেলে শাহবাগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হবে। দেশের সব জেলা ও মহানগরেও এই হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।”
Comments