Image description

বিজয় দিবসেও ভোটের প্রচার চালালেন বেশকিছু রাজনৈতিক নেতার অনুসারীরা। আজ সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসে নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে রীতিমতো প্রার্থীর প্রচারণা করে।  

যদিও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক আগাম প্রচার বন্ধ করতে ইসির নির্দেশনা আছে।  নির্বাচনকেন্দ্রিক আগাম প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে রোববার সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু তারা তা আমলেই নেননি।

মঙ্গলবার বিজয় দিবসের সকালে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে দলে দলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন হাজারো মানুষ। এ সময় তাদের বিভিন্ন নেতার নামে টানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।  

ইসির ওই নির্দেশনায় ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতীয় অনুষ্ঠানে নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল।

এর একদিন বাদে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিজয় দিবসের আয়োজনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা দেখা গেল।

ঢাকা-১৯ আসনের (সাভার-আশুলিয়া) বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কয়েক হাজার অনুসারী ভিড় জমান স্মৃতিসৌধে। তাদের হাতে বিপুল সংখ্যক ব্যানার ছিল, যেখানে সরাসরিই লেখা ছিল 'ধানের শীষে ভোট দিন'।

এ সময় কর্মীরা তাদের নেতার নাম নিয়ে মুহূর্মুহূ স্লোগান দিতে থাকেন। 'ভোট দিব কিসে, ধানের শীষে', 'আজকের এই দিনে, জিয়া তোমায় মনে পড়ে'– এমন স্লোগানও শোনা যায়। তাদের মাথায় ছিল প্রার্থীর নাম খচিত টুপি।

স্লোগান কীসের জানতে চাইলে আরিফুর রহমান ইকবাল নামে একজন বললেন, "বাবু ভাই নমিনেশন পাইছে, ভাই জিতবে। আমরা ভাইয়ের পক্ষ থেকে আসছি।"

একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাওয়া মোহাম্মদ আইয়ুব খানের অনুসারীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মত। নেতার নামে স্লোগান দিতে দিতে তারা স্মৃতিস্তম্ভের দিকে এগিয়ে যান।

স্মৃতিসৌধের সীমানা প্রাচীরের বাইরে শখানেক যুবককে জাতীয় নাগরিক পার্টির নামে স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এলে তাদের সঙ্গে তারা স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেন শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

এর আগে তারা 'সাভারের মাটি, এনসিপির ঘাটি', 'একাত্তর মরে না, চব্বিশ ছাড়ে না'সহ দলীয় প্রতীক শাপলা কলির নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি বড় মিছিলে নাজমুল হাসান অভির নামে ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যায় অনুসারীদেরকে হাতে। তারাও নেতার নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

রাজনৈতিক দলের এমন আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন শ্রদ্ধা জানাতে আসা নাগরিকরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, "আজকেও যখন আমরা স্মৃতিসৌধে এসে দেখি যে একটি রাজনৈতিক দল, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের এতটুকু সেন্সও নাই যে, আমার জুতাটা খুলে ফুলটা দেয়া উচিত।

“আমি যে আসলে এখানে রাজনীতি করতে আসি নাই, নির্বাচনের প্রচার করতে আসি নাই, শুধু একটা সুভেনির ছুড়ে মারলাম…। আমরা এটাও দেখেছি। অথচ আমরা স্টুডেন্টরা ফুল দিতে পারছি না। কারণ তারা সুভেনির ছোঁড়াছুড়ি করছে সামনে।"

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের পর ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রচার চালানোর সুযোগ রয়েছে।

রোববারের নির্দেশনায় ইসি বলেছে, ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী, নির্ধারিত শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে, ভোটগ্রহণের তিন সপ্তাহ আগে থেকে ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টার আগ পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার করা যাবে।

এই সময়সীমার বাইরে নির্বাচনি পরিবেশ বিঘ্নিত না করে তথা নির্বাচনি পরিবেশ এবং ওই আচরণ বিধির শর্ত প্রতিপালন করে জাতীয়, আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন এবং ধর্মীয়, সামাজিক ও এধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের সম্মতি বা অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।