বাজারে কাটছে না অস্থিরতা। নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দামে দিশেহারা মানুষ। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। প্রতি সপ্তাহেই বদলে যাচ্ছে পণ্যের মূল্য তালিকা। বরং বছরের পর বছর সাধারণ মানুষ এভাবেই নাকাল ও নাজেহাল হচ্ছে। বাজারের চিত্র খুবই হতাশার- কখন কোন পণ্যের দাম হঠাৎ করে বাড়ছে তা বলা কঠিন। বিগত সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল কিন্তু যে লাউ সেই কদু। বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়, বাজারে এক সপ্তাহে চারটি পণ্যের দাম বেড়েছে- চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও পেঁয়াজ। আগেই এসব পণ্যের দাম বেশি ছিল। অনেক শোরগোলের পর ডিমের দাম কিছুটা কমেছে; কিন্তু আগের অবস্থায় আসেনি। কোনো পণ্যের শুল্ক বাড়ালে দামও হু হু করে বেড়ে যায়। কিন্তু চিনি ও চালের শুল্ককর কমালেও বাজারে তার প্রভাব নেই। ভোক্তাকে আগের চেয়ে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। চাল, ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের দাম বাড়লে বেশি সমস্যায় পড়েন গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ। এমন চিত্র থেকে প্রমাণ মেলে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সব উদ্যোগ। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। দেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দুর্বল অর্থনীতির দেশে এক বড় সমস্যা।
ফলে নিম্ন আয়সম্পন্ন মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্তরাও তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রায় দুই বছর ধরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বেসামাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, আমদানিনির্ভরতা, বাজারে সিন্ডিকেট, মজুতদারির কারণে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সর্বোপরি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে বয়ে আনছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। জনসাধারণের স্বস্তির জায়গা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত দুই মাসে ভোগ্যপণ্যের গড় দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ‘করপোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই’ বাজারে অস্থিরতা। প্রতিশ্রুতির দিনের তালিকায় দিন যোগ হয় কিন্তু পণ্যের দাম কমে না। আরও বাড়তি টাকা গুনতে হয় ভোক্তাদের। কিন্তু বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে দরিদ্র ও নিন্মমধ্যবিত্ত শ্রেণির, বিশেষ করে স্থির আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছিল, ক্রমেই তা হতাশায় রূপ নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি যদি সত্য হয় তাহলে ব্যর্থতা কাদের? উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বহুদিন ধরেই অস্বস্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। বস্তুত নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত; সমস্যার সমাধানে কী করণীয় তাও বহুল আলোচিত। আলোচিত সমস্যার সমাধানে জোরালো বাজার তদারকি অব্যাহত রাখা দরকার।
টাস্কফোর্সের উদ্যোগে প্রতিদিন বাজার মনিটরিংসহ আরও বেশকিছু কার্যক্রম চলমান রাখার কথা ছিল, তাদের দায়িত্ব পালনও করছেন। জনগণের প্রত্যাশাও ছিল-এতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে। কিন্তু বাজার কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না- এমন প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না- বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ছাত্র-জনতার অর্জন অনেকটা ম্লান হয়ে যাবে। বিগত সরকার রাজনৈতিকভাবে যতটা শক্তিশালী ছিল- ঠিক ততটাই ব্যর্থ হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। টাকার অবমূল্যায়ন ও সিন্ডিকেটের থাবায় পণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। আমাদের দেশের সমস্যা বহুমাত্রিক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের মুদ্রানীতি, সিস্টেম পলিসি, সুদনীতি, বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পলিসি জড়িত।
আমাদের প্রত্যাশা বিগত সরকার যা ১৬ বছরে পারেননি সেই কঠিন কাজটি এ যুগের তরুণদের দ্বারা অসম্ভব নয়। জনগণের কাছে এখন তারা আস্থার প্রতীক। সবকিছু বিবেচনা করে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। বস্তুত অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তোলে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক সংস্কার কর্মসূচিই বাধাগ্রস্ত হবে। তাই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনে বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
Comments