Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা-প্রথা নিয়ে টানা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় যুগের শাসনের অবসান ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছিল মূলত গত ৫ জুলাই থেকে। শুরুতে এই আন্দোলন অহিংস হলেও তা সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠে ১৫ জুলাই থেকে। প্রথমে আন্দোলন প্রতিহত করতে নামেন ছাত্রলীগ ও দলীয় সমর্থকরা। পরে নামানো হয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে। বিগত সরকার শক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের দমন করার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নির্বিচারে বলপ্রয়োগে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ শিশুসহ ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন।

জানা যায়- গত ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত গণমাধ্যম ও অন্যান্য সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া সরকার পতনের পর ৫ থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে বিক্ষোভের নতুন ধাক্কায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে আছেন বিক্ষোভকারী, পথচারী, সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যও। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কোনো ক্ষমা নেই। ‘মব জাস্টিস’ গ্রহণযোগ্য নয়, সব হত্যার বিচার করতে হবে- জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত নৃশংসতা ও গণহত্যার তদন্তকারী জাতিসংঘের স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান মিশন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার।

গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার প্রধান উপদেষ্টাকে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনের কাজ এবং ঢাকায় উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, সংস্কার কমিশনের প্রধান, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করেন। এটি শুধু তার দাবি নয়- বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরও। তবে এই তদন্তে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকায় কোনো ধোঁয়াশা রাখা যাবে না। তদন্তে স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে যেন কোনো সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কয়েকশ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি দাবি করেন।

বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা বঞ্চনার শিকার হয়ে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে ইতিহাসের অনন্য এই নজিরবিহীন মুহূর্ত সৃষ্টি করেছে। দেশে যথেষ্ট বৈষম্য, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে, এসব বন্ধ করতে ন্যায়বিচার হতে হবে। এবারের সংস্কার অবশ্যই টেকসই হতে হবে, যেন গত কয়েক দশকের অপমানজনক চর্চার পুনরাবৃত্তি না হয়। এ জন্য দরকার জবাবদিহি বা ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা। স্থানীয় কোনো সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রায় শূন্যের কোটায়। ফলে তাদের অধীনে উক্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত গ্রহণযোগ্য হবে না।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতনের পর পুলিশসহ হত্যাকাণ্ডের অপরাধের তদন্ত পরিচালনায় সক্ষম সংস্থাগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। দল-নিরপেক্ষ সরকার হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা তদন্ত সংস্থার কাজে সরকারি হস্তক্ষেপ হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে দীর্ঘ সময় অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকায় স্থানীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে সরকারবহির্ভূত কোনো শক্তির পক্ষে প্রভাব বিস্তার একেবারে দুরূহ নয়। তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার হওয়া সময়ের দাবি।

তাই সম্পূর্ণ তদন্ত জাতিসংঘের অধীনেই সম্পন্ন হোক। সরকার শুধু আইনি বা অপর কোনো সহযোগিতা দিবে। অতীতের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে মানবাধিকার চর্চা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার, হত্যাকাণ্ডের এমন অপরাধের ন্যায় বিচারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস