Image description

বই উৎসবের দিন খুবই নিকটে। প্রতিবছরের শুরুতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক পেয়ে থাকে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এটি করা হচ্ছে। এই দিনটি শিক্ষার্থীদের আনন্দের দিন। তারা খুশিমনে স্কুলে যায় এক উৎসবমুখর পরিবেশে বই আনার জন্য। নতুন বই পেয়ে তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বছর নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র দুই মাস সময় বাকি থাকলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি। শুধু তাই নয়, কয়েকটি শ্রেণিতে হয়নি টেন্ডারও। এখনো বই ছাপা শুরু না হওয়ায় জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

অথচ দরপত্র অনুযায়ী, মুদ্রকদের এসব বই ছাপার জন্য ৫০ দিন সময় দিতে হয়। উল্লেখ্য, এবার স্কুল-মাদ্রাসা-কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে ৪০ কোটি বই ছাপানোর কথা রয়েছে। এসব বইয়ের সঙ্গে জুলাই-আগস্টের যে আন্দোলন, এর গ্রাফিতি যুক্ত করার কথাও রয়েছে। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের অবদানকেও নতুনভাবে উপস্থাপন করা হবে। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা শ্রমসাধ্য তো বটেই, প্রয়োজনীয় সময়ও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। ফলে বছরের শুরুতেই ছাত্রছাত্রীদের হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। মুদ্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের শুরুতে কিছু বই পৌঁছানো সম্ভব হলেও সব বই ছাপা শেষ হতে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে। 

মনে রাখা দরকার- বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের বই তুলে দিতে না পারলে তা হবে দুঃখজনক। অবশ্য জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন, সেই সময়টায় দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কাজের গতি ছিল ধীর। তাছাড়া এবারের বইয়ে কিছু পুরনো বিষয় বাদ দিয়ে নতুন কিছু যুক্ত করা হবে বলে বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করাটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেভাবে দোষ দেয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দেরিতে বই হাতে পেলে তারা পিছিয়ে যাবে।  

দুঃখজনক হলেও সত্য- নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র ৫৪ দিন বাকি। তাই বাকি সময়ে সব বই ছাপানোর কাজ শেষ করে নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দেয়া যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০১০ সাল থেকে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পেয়ে আসছে। শিক্ষার্থীরা খালি হাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে নতুন বই নিয়ে খুশিমনে বাড়ি ফেরে। এই আনন্দ তার বই পড়ার উদ্দীপনার সঙ্গে যুক্ত। এটি অনস্বীকার্য কয়েক বছর ধরে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ করা নানা কারণেই বর্তমান সরকারের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। 

বিনামূল্যে বই দেয়ার কারণে অনেক দরিদ্র অভিভাবকের আর্থিক সাশ্রয় হয়। কিন্তু মহৎ এ উদ্যোগ সময়মতো না করার কারণে যদি ম্লান  হয়ে যায়- তা হবে অত্যন্ত পরিতাপের। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অবশ্য বলেছেন-কাগজের সংকট তৈরি না হলে সময়মতোই কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে। আমাদের কথা হলো, চেষ্টাটা যেন আন্তরিক হয়। দ্বিতীয় কথা, তাড়াহুড়ো করে বই ছাপাতে গিয়ে বইয়ের মান যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আবার পুরো প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ঢুকে গেলে মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এনসিটিবি কর্তৃপক্ষকে সব বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে হবে অবশ্যই। 

আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ কার্যক্রম সম্পন্ন করে সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। শুধু তাই নয়- অতীতে কোমলমতি শিশুদের হাতে যেসব বই তুলে দেয়া হয়েছে সেসবের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুল-ভ্রান্তি ও অসঙ্গতি ধরা পড়েছে এবং ছাপার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মলাটে চাকচিক্য থাকলেও বইয়ের ভেতরে ছাপা অত্যন্ত নিন্মমানের। তাই শতভাগ নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়ন ও মুদ্রণের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।