Image description

দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে রাজধানীর অপরাধীরা। দিন-দুপুরেই খুনোখুনি ডাকাতি, নিত্যনতুন কৌশল। কেবল বাসা লুটপাটই নয়, লুটের পর বাচ্চা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে নিত্যনতুন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে অপরাধীরা। চুরি করতে গিয়ে খুন করা হয় বাসার মালিককে। দিন-দুপুরে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। প্রায় প্রকাশ্যেই ঘটছে অস্ত্রবাজি ও খুনাখুনি। প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মাঝে মাঝেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে দুর্বৃত্তদের। তারা হামলে পড়ছে প্রতিপক্ষ কিংবা সাধারণ মানুষের ওপর। সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ভেদ করা বুলেটে সাধারণ মানুষের নির্মম মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। 

আবার দুর্বৃত্তের অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে লিপ্ত হচ্ছে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে। এদের অনেকেই পতিত সরকারের অনেক নেতার অধীনে কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়। এটি শুধু রাজধানী বা জেলা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, মফস্বলেও ছড়িয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ যে কোনো তুচ্ছ ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা। সারা দেশেই প্রতিদিন হত্যা, হামলা, ভাঙচুর, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ঘটছে। মানুষ এসব কারণে স্বস্তিতে নেই। যা খুবই উদ্বেগের। 

বিভিন্ন সংস্থার তথ্যে জানা যায়- বিগত সরকার পতনের পর গত তিন মাসে অন্তত ৭১৫ জনের বেশি মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে অক্টোবরে ৯১, আগস্টে ৫৪১ ও সেপ্টেম্বরে ৮৪ জন নিহত হন। এ ছাড়া গত তিন মাসে গণপিটুনিতে ৮৪ জন নিহত হন। এমন চিত্রই বলে দেয় দেশের মানুষ কত উদ্বেগের মধ্যে বাস করছেন! বিগত সরকারের পতনের পর সারা দেশে চার শতাধিক থানা থেকে বিপুল পরিমাণ লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ অপরাধীদের হাতে হাতে। ফলে দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য- পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এখনো অনেক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে থানা থেকে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। সেসব অস্ত্রও সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। 

সংশ্লিষ্টরা বলছে, গত দুই মাস ধরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক কারবারি ও বিভিন্ন অপরাধীর বিরুদ্ধে সারা দেশে চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান। এসব অপরাধীদের ঠেকাতে সম্প্রতি নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি অভিযানের গতি আরও বাড়ানো হয়েছে। তাতেও কাজ হচ্ছে না। নানান কায়দায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ বাহিনীর অপারেশনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। নইলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। কারণ এর সুযোগ নেবে দেশি-বিদেশি নানা মহল। একটি বিষয় দুঃখজনক হলেও সত্য- সারাদেশে পুলিশ প্রশাসনের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তিন মাসেও তাদের গতি ফেরেনি। 

এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে সারাদেশ। এসব সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠার আগেই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বর্তমান নাজুক অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সর্বপ্রথম অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর অবকাঠামোগত সংস্কারই জননিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে- এমন প্রত্যাশা সবার।