Image description

উত্তরাঞ্চলের বাণিজ্যিক রাজধানী নীলফামারীর সৈয়দপুরে ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে কেনাকাটা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে জমজমাট বেচাকেনা। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত দোকানগুলো এখন সরগরম ক্রেতাদের ভিড়ে।  বাজারের নিউ ক্লথ মার্কেট, রেলওয়ে নিউ সুপার মার্কেট, সৈয়দপুর প্লাজার বিভিন্ন বিপণিবিতান ও দোকানগুলোতে দিন রাতে সমানতালে ভিড় বাড়ছে। তবে এবার সৈয়দপুরের রমণীরা মজেছেন পাকিস্তানি রং বেরঙের থ্রি পিসের প্রেমে। এক্ষেত্রে রমণীদের পছন্দ ও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানি তাওয়াক্কল, নুরস, বিন সাইদ, বিন হামিদ থ্রি পিসগুলো। এসব থ্রি পিস নিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিপণী বিতানে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী মেয়েরা। 

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এভাবেই ক্রেতাদের আগমনে জমতে শুরু করেছে সৈয়দপুরের বিভিন্ন মার্কেটগুলো। ফলে বেচাবিক্রিও জমেছে বেশ। দিন রাত যখনই সুযোগ হচ্ছে তখনই ঈদের কেনাকাটায় বেরিয়ে পড়ছেন নারী পুরুষরা।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে এবার বাজার পাকিস্তানি থ্রি পিসের দখলে। মেয়েদের পছন্দ ও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানি তাওয়াক্কল থ্রি-পিস। পাশাপাশি ভারতীয় ও দেশি সুতি কাপড়গুলোও বিক্রি বেশ ভালো। সমানতালে বিক্রি হচ্ছে গাউন ও কাজ করা লং ফ্রকগুলো। এছাড়া টুপার্ট, ফোরপার্ট, কুর্তি, জিপসি, সারারা, গারারা ফোরপিসও বিক্রি হচ্ছে বেশ। এছাড়া বাজার ধরেছে পাকিস্তানি লংফ্রক।

নীলফামারীর টেঙ্গনমারী থেকে সৈয়দপুরের আশফাক ক্লথ স্টোরে এসেছেন কলেজ শিক্ষক আফসানা পারভীন সীমা। তিনি বললেন, সৈয়দপুরে কেনাকাটার পরিবেশটা ভালো। এখানে সহনীয় মূল্যে সব পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। সুন্দর ডিজাইন আর আরামদায়ক হওয়ায় দুটি পাকিস্তানি তাওয়াক্কল থ্রি-পিস নিয়েছি ১৬শ টাকায়। দাম বেশি মনে হয়নি বলে জানান তিনি।

শহরের বাঁশবাড়ী মহল্লার কলেজ শিক্ষার্থী সিফাত, আম্বর, ইয়াসমিন, গোলাপীসহ অন্যান্য বান্ধবীরা মিলে এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে সাজু ক্লথ স্টোরে। বাজারের বিক্রির শীর্ষে থাকা পাকিস্তানি নুর ও তাওয়াক্কল নিয়েছেন তাঁরা। তারা জানান, একই ডিজাইনের সব বান্ধবী নিয়েছি। কাপড়টি পছন্দ হয়েছে তাই দাম কত সেটা বড় বিষয় নয় বলে জানান তাঁরা। 

নতুন বাবুপাড়া থেকে আসা ক্রেতা জেসমিন তার ছোট মেয়ের জন্য নিয়েছেন লেহেঙ্গা। তিনি জানান, ভালো-সুন্দর কালেকশন শেষ হয়ে যাবে তাই আগে ভাগে শিশুদের পোশাক কিনে নিচ্ছেন। এছাড়া ভারতীয় কাপড়ের ডিজাইন ও রং ভাল লাগলেও দাম কিছুটা বেশি মনে হয়েছে বলে তিনি নিয়েছেন ইন্ডিয়ান বুটিক্স কাপড়।

এভাবে সৈয়দপুর নিউ ক্লথ মার্কেটের থ্যাংক্স ক্লোথ স্টোর, মিলন ক্লোথ স্টোর, আলহাজ্ব ক্লোথ স্টোর, সৈয়দপুর নিউ সুপার মার্কেটের বাগদাদ ক্লোথ স্টোর, কোহিনুর ক্লোথ স্টোর, আসফাক ক্লোথ স্টোর, সাজু ক্লোথ স্টোর, সৈয়দপুর প্লাজার পিন্ধন, দর্শিনীসহ বিভিন্ন বিপণি বিতানগুলোতে এ বছর মেয়েদের জন্য দোকানিরা এনেছেন বিভিন্ন ধরনের পাকিস্তানি সব থ্রিপিস। এছাড়া দেশি কাপড় গোল, হার্ট বালিকা, লাসা, এছাড়া ইন্ডিয়ান বুটিক্স, কাশিশসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লেহেঙ্গা সারারা, গারারা।

পাকিস্তানি থ্রি-পীসগুলো ডিজাইন অনুসারে ৮শ থেকে ৩ হাজারের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি সুতি থ্রি-পিসগুলো বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে দুই হাজারের মধ্যে। অপর দিকে ভারতীয় গাউন, লাসা কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়। লংফ্রক দুই হাজার থেকে আট হাজার টাকা। দাম গত বছরের ন্যয় রয়েছে তেমন বাড়েনি বলে জানান দোকানিরা।

এছাড়া ছেলেদের জিন্স প্যান্ট, গ্যাবাডিং প্যান্টের পাশাপাশি কালার ফুল শার্ট, চেক শার্ট, এক কালার শার্ট রয়েছে পছন্দের তালিকায়। জিন্স প্যান্ট ৮শ থেকে দুই হাজার, এবং শার্ট ৪ শ থেকে পনেরোশো পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৯শ থেকে ১৫শ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ছোটদের লেহেঙ্গা। এছাড়া টোপ,স্কার্ট, ফ্রোকও রয়েছে ছোটদের পছন্দের তালিকায়।

এদিকে ছেলেদের নানা ধরনে পাঞ্জাবির সমাহার ঘটিয়েছে সৈয়দপুর প্লাজার গাউসিয়া পাঞ্জাবী হাউস। এখানে ১ হাজার থেকে শুরু করে ৪ হাজারের মধ্যে নানা ডিজাইনের ইরানি, ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি পাঞ্জাবী পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান দোকানের মালিক শাহজাদা।

সৈয়দপুর নিউ সুপার মার্কেটের আশফাক ক্লোথ স্টোরের রকি, বাগদাদ ক্লোথ স্টোরের সামদানী ও সাজু ক্লোথ স্টোরের সাজু জানান, বিক্রির দিক দিয়ে পাকিস্তানি তাওয়াক্কল, নুর, বিন সাইদ ভালোই বাজার ধরেছে। পাশাপাশি ইন্ডিয়ান গাউন ও গরমকালে সুতি কাপড়ে আরাম বেশি বলে দেশীয় সুতি থ্রিপিস পছন্দ করছে মেয়ে ক্রেতারা।

এদিকে এবার টাঙ্গাইল শাড়ি ৬০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা, জর্জেট শাড়ি ১২০০ টাকা থেকে ২০০০ হাজার টাকা, সিল্ক শাড়ি দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এমব্রয়ডারি, হাতের কাজ, স্ক্রিন প্রিন্স ও কারচুপির কারুকাজ এসব শাড়িতে এনেছে অন্যান্য সৌন্দর্য। সৈয়দপুরের ঈদ মার্কেট এর এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগ রাত পর্যন্ত।