ইসলাম ধর্মে সুদকে (রিবা) কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এটিকে একটি গুরুতর পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। মুসলিমদের জন্য সুদের আদান-প্রদান বা এর সাথে কোনোভাবে জড়িত থাকা হারাম। এমনকি সুদের অর্থ ভোগ করা, যেমন নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করাও জায়েজ নয়। এই নিষেধাজ্ঞা কুরআন এবং হাদিস উভয় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
সম্প্রতি, সুদের অর্থ মসজিদে দান করা যাবে কিনা, এই প্রশ্নটি অনেকের মনে দেখা দেয়। ইসলামিক পণ্ডিতরা এ বিষয়ে একমত যে, হারাম বা অবৈধ উপায়ে উপার্জিত কোনো অর্থ মসজিদ নির্মাণ বা ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কারণ মসজিদ আল্লাহর ঘর এবং এটি কেবল হালাল ও পবিত্র উপার্জিত অর্থ দ্বারাই আবাদ করা উচিত।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সুদকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন। সূরা বাকারার ২৭৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।" অন্য আয়াতে (সূরা বাকারা: ২৭৮, ২৭৯) আল্লাহ মুমিনদের সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, যারা সুদ বর্জন করবে না, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)ও সুদের সাথে জড়িত সকল পক্ষকে সমানভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। জাবির (রা.) ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন যে, তিনি সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক এবং সুদের সাক্ষীদের অভিশাপ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, তারা সবাই সমপর্যায়ের দোষী (সহিহ মুসলিম: ১৫৯৮)। এই হাদিসটি সুদের লেনদেনের সাথে জড়িত সকলের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা প্রদান করে।
ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, সুদের অর্থ নিজের খাওয়া-পরা বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হারাম। যদি কোনোভাবে সুদের টাকা হাতে আসে, তাহলে প্রথমত তা সুদদাতাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সেই টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কোনো গরিব বা অভাবী ব্যক্তিকে দান করে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই দানের উদ্দেশ্য সওয়াব অর্জন নয়, বরং হারাম সম্পদ থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
মসজিদ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করা মুসলিমদের সম্মিলিত দায়িত্ব। তবে এটি অবশ্যই হালাল ও পবিত্র উপার্জিত অর্থ দ্বারা সম্পন্ন করতে হবে। ইসলামে মসজিদকে অপবিত্র করা বা হারাম সম্পদ দ্বারা এর পবিত্রতা নষ্ট করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, "একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না।" (সূরা তাওবা: ১৮)। এই আয়াতটি পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করে যে, যারা আল্লাহর ঘর আবাদ করবে, তাদের ইমানদার এবং সৎ উপার্জনের অধিকারী হওয়া আবশ্যক।
সুতরাং, সুদের টাকা মসজিদে দান করা যাবে না। কারণ এটি হারাম সম্পদ এবং এর মাধ্যমে মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হয়। মুসলিমদের উচিত হালাল উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়েই আল্লাহর ঘরের খেদমত করা, যাতে এর বরকত ও পবিত্রতা বজায় থাকে।




Comments