ট্রাম্পের জাতিসংঘ সমালোচনা: শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার অভিযোগ, কার্যক্রম ‘ফাঁকা বুলি’

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক এই সংস্থার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ৭৯তম সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি জাতিসংঘকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেন এবং সংস্থাটির কার্যক্রমকে ‘ফাঁকা বুলি’ বলে অভিহিত করেন। এছাড়া, তিনি অভিবাসন উৎসাহিত করার অভিযোগ তুলে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর ‘আক্রমণ’ চালানোর অভিযোগ করেন।
জাতিসংঘের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন
৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প জাতিসংঘের কার্যক্রম নিয়ে উপহাস করে বলেন, “জাতিসংঘের উদ্দেশ্য আসলে কী? তাদের যা করতে দেখা যায় তা হলো কড়া ভাষায় চিঠি লেখা। এসব ফাঁকা বুলি দিয়ে যুদ্ধ থামানো যায় না।” তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ভাঙা এসকেলেটর ও ত্রুটিপূর্ণ টেলিপ্রম্পটার নিয়েও অভিযোগ করেন, যা তার বক্তৃতার সময় বাধার সৃষ্টি করে।
ট্রাম্প অভিবাসন ইস্যুতে জাতিসংঘের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এই সংস্থা পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণে অর্থায়ন করছে। উন্মুক্ত সীমান্তের এই ব্যর্থ পরীক্ষা শেষ করার সময় এসেছে। আপনাদের দেশগুলো ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।” তিনি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র সাদিক খানের বিরুদ্ধেও আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে ট্রাম্প ‘বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং বিদেশি সহায়তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন।
যুদ্ধ বন্ধে ব্যর্থতার স্বীকৃতি
ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের সমাধানে তিনি সফল হননি। তিনি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার কিছু দেশের সিদ্ধান্তকে ‘হামাসের নৃশংস কর্মকাণ্ডের পুরস্কার’ হিসেবে সমালোচনা করেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য হামাসের কাছে জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানান।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিনি তুলনামূলক নরম সুরে কথা বললেও, অনির্ধারিত কিছু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতির কথা জানান। তিনি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ না করায় ইউরোপীয় মিত্রদের পাশাপাশি চীন ও ভারতের সমালোচনা করেন। ট্রাম্প গত বছর আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। তবে তিনি সম্প্রতি বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট পুতিন আমাকে সত্যিই হতাশ করেছেন।”
জাতিসংঘ মহাসচিবের সতর্কতা
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উদ্বোধনী ভাষণে সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সহায়তা হ্রাস বিশ্বের জন্য ‘ধ্বংস’ ডেকে আনছে। তিনি প্রশ্ন করেন, “আমরা কোন ধরনের বিশ্ব বেছে নেব? অপ্রচলিত শক্তির বিশ্ব, নাকি আইনের শাসনের বিশ্ব?”
জাতীয়তাবাদী নীতি ও বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক জাতীয়তাবাদী নীতি বাস্তবায়ন করছে, যা বিশ্বের সঙ্গে দেশটির সহযোগিতা অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে। তিনি বিদেশি বিচারকদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, যাদের রায়কে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী বলে মনে করেন।
আন্তর্জাতিক বৈঠক ও নিরাপত্তা
অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্পের আর্জেন্টিনার ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলির সঙ্গে একান্ত বৈঠকের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মাইলির সরকারকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এদিকে, অধিবেশন উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, তারা ১ লাখেরও বেশি মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার করে জাতিসংঘের আশপাশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করার একটি ‘টেলিযোগাযোগ ষড়যন্ত্র’ ব্যর্থ করে দিয়েছে, যাতে একটি রাষ্ট্রের সমর্থিত কিছু গোষ্ঠী জড়িত ছিল।
সূত্র: এএফপি
Comments