Image description

ভারতের লাদাখে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় পূর্ণ রাজ্যের মান্যতার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। বুধবার লেহ শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

বিক্ষোভের শুরু ও সহিংসতা

বুধবার সকালে লেহ শহরে শত শত বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। প্রথমে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে শুরু হলেও, পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দলীয় কার্যালয় এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং লাটিচার্জ করে, যার ফলে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে লাদাখে প্রথমবারের মতো এমন বড় ধরনের সহিংসতা।

দীর্ঘদিনের দাবি

লাদাখের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবিতে বিক্ষোভ, অনশন ধর্মঘট এবং সম্পূর্ণ বনধের মতো কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ। গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন, দাবি করে বলেছেন, লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনতে হবে।

পটভূমি

২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাশ করে। এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে পৃথক করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়। সরকার জম্মু ও কাশ্মীরকে শিগগিরই রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও লাদাখের ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে লাদাখে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে।

লাদাখে কোনো বিধানসভা নেই, যা স্থানীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক শূন্যতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। শুরুতে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার সিদ্ধান্তকে সোনম ওয়াংচুকসহ অনেকে স্বাগত জানালেও, লেফটেন্যান্ট গভর্নরের প্রশাসনের অধীনে রাজনৈতিক অধিকারের অভাব নিয়ে অসন্তোষ বাড়তে থাকে।

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন

লাদাখের বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ লেহ এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্গিলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো প্রথমবারের মতো একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম—লেহ অ্যাপেক্স বডি এবং কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স—গঠন করে আন্দোলন শুরু করে। বুধবারের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল লেহ অ্যাপেক্স বডির যুব শাখা।

লেহ অ্যাপেক্স বডির যুব শাখার চেয়ারম্যান থুপস্তান সোয়াং বলেন, “লাদাখে আমরা চারটি মূল দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছি। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু ঘটনার কারণে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠেছে। এতে আমাদের কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। আমরা লাদাখের মানুষকে আশ্বাস দিতে চাই, তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।” তিনি ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের ঘোষণা দেন।

কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা

ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, আগামী ৬ অক্টোবর কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে লাদাখের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত মার্চে লাদাখের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের মূল দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। একজন নেতা এনডিটিভি-কে বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা তার ভুল ছিল। তিনি রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।”

ভবিষ্যৎ

কেন্দ্র সরকার লাদাখের দাবি খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করলেও, বারবার আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে লাদাখে চলমান অসন্তোষ এবং সহিংসতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।