গাজার উদ্দেশে যাত্রারত ফ্রিডম ফ্লোটিলার একটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই জাহাজে বাংলাদেশি খ্যাতনামা লেখক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ ৯৩ জন সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী এবং মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজটি আটক করে যাত্রীদের একটি ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করেছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এবং থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নৌবহরের অংশ হিসেবে গাজার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ‘দ্য কনশেনস’ নামের এই জাহাজ। জাহাজটি গাজায় ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মানবিক মিশন নিয়ে যাত্রা করেছিল। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই নৌকার কনভয়ে হামলা চালায় এবং এটির সঙ্গে থাকা তিনটি ছোট নৌকাও আক্রমণের শিকার হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি এক্স-বার্তায় জানিয়েছে, জাহাজটি তাদের নৌ-অবরোধ লঙ্ঘনের চেষ্টা করছিল, যা তারা ‘আইনি’ বলে দাবি করে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, জাহাজ এবং এর যাত্রীদের ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং সকল যাত্রী নিরাপদ ও সুস্থ আছেন। তাদের দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা জানিয়েছে, তাদের মানবিক মিশন গাজার মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ এবং অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ। শহিদুল আলম, যিনি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও সামাজিক কর্মী, এই মিশনে সাংবাদিক হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি গাজার পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য এই যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। ফ্রিডম ফ্লোটিলার প্রতিনিধিরা এই হামলাকে ‘অবৈধ’ এবং ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা দাবি করেছেন, তাদের জাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল এবং কোনো সামরিক হুমকি সৃষ্টি করেনি।
ইসরায়েলি বাহিনীর এই পদক্ষেপ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এই হামলা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর আঘাত হানছে।
এদিকে, শহিদুল আলমের পরিবার ও সমর্থকরা তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা দ্রুত তার মুক্তি এবং নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সম্প্রদায়ও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শহিদুল আলমসহ সকল যাত্রীর মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনার পর ফ্রিডম ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। তারা গাজার অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি অব্যাহত রাখবে বলেও জানিয়েছে।




Comments