
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিরপরাধ দাবি করে তার খালাসের আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমীর হোসেন। সোমবার (২০ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে তিনি এ দাবি করেন।
এদিন ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের পক্ষে প্রথম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। যুক্তিতর্ক শেষে এক ব্রিফিংয়ে মো. আমীর হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা নিরপরাধ। শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের খালাস চাই।” তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক নয় এবং প্রসিকিউশন সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, “যেহেতু সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, সেহেতু আমি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের খালাস প্রত্যাশা করি।”
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) টানা পঞ্চম দিনে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। ওইদিনই আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য সোমবারের দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। প্রসিকিউশন এ মামলায় ৫৪ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে, যার মধ্যে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম উল্লেখযোগ্য। তবে, মামলার প্রধান দুই আসামি পলাতক থাকায় তারা কোনো সাফাই সাক্ষী উপস্থাপন করতে পারেননি।
প্রসিকিউশনের শেষ শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মন্তব্য করেন, অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় শেখ হাসিনাকে ১৪০০ বার ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত। তিনি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ডের সাজার আবেদন করেন। এছাড়া, ফ্যাসিস্টের মাস্টারমাইন্ড ও তাদের দোসরদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জুলাইয়ে শহিদ পরিবারগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও উত্থাপন করা হয়।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগের প্রতিবেদন মোট ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২,০১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ ৪,০০৫ পৃষ্ঠা এবং শহিদদের তালিকার বিবরণ ২,৭২৪ পৃষ্ঠা। মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। গত ১২ মে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ মামলা দায়ের করা হয়। প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী। তবে, আসামিপক্ষের দাবি, এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এবং তারা নিরপরাধ।
এ মামলার পরবর্তী শুনানি ও রায় ঘোষণার জন্য সবাই অপেক্ষায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই বিচার প্রক্রিয়া দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
Comments