রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড গত বুধবার (৮ই অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হলেও, এর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক প্রার্থীর অভিযোগ, লিখিত পরীক্ষায় ইতিহাসের প্রশ্ন না করে বিষয় বহির্ভূত প্রশ্ন করা হয়েছে।
একাধিক প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইতিহাস বিভাগের ৫০ নম্বরের ১ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় ৪টি প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি ইতিহাস বিভাগ থেকে করা হলেও বাকি একটি প্রশ্ন ইতিহাস বহির্ভূত ছিল। এছাড়াও ইতিহাস বিষয়ক একটি প্রশ্নের শব্দবিভ্রাটজনিত কারণে অনেক প্রার্থী ভালোভাবে উত্তর দিতে পারেননি। প্রার্থীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিষয় বহির্ভূত প্রশ্নের পরীক্ষা বাতিল করে নতুনভাবে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিতর্কিত ২ নম্বর প্রশ্নটি ছিল ‘‘কৃষি বিপ্লবকে কী কারণে প্রতারণার বিপ্লব বলা হয়?” এবং ৪ নম্বর প্রশ্নটি ছিল “ফরাসি বিপ্লব কিভাবে অভিজাতদের বিপ্লব থেকে বুর্জোয়াদের বিপ্লবে পরিণত হয়?” অভিযোগ উঠেছে যে, ২ নম্বর প্রশ্নটি ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিতই নয় এবং ৪ নম্বর প্রশ্নটি শব্দবিভ্রাটজনিত। এই ধরনের ইতিহাস বহির্ভূত প্রশ্ন একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ পরীক্ষার মতো স্পর্শকাতর পরীক্ষায় কেন দেওয়া হলো, তা অনেকের মনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক প্রার্থী জানান, ইতিহাস বিষয়ে তারা কখনোই এ ধরনের প্রশ্নের সাথে পরিচিত নন এবং অধিকাংশ শিক্ষার্থীই প্রশ্নটির উত্তর লিখতে পারেননি। তবে যারা ভাগ্যবান বা যাদের প্রশাসন নিতে চায়, তারাই শুধু এ প্রশ্ন লিখতে পেরেছে বলে অভিযোগ তাদের।
২ নম্বর প্রশ্নটি ইতিহাস বিভাগের সাথে সম্পর্কিত কিনা জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ২ নম্বর প্রশ্নটিকে অর্থনীতি, কৃষি অর্থনীতি বা সমাজবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত বলে মতামত দেন। অন্যদিকে ৪ নম্বর প্রশ্নটি শব্দবিভ্রাটজনিত হওয়ায় প্রার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, "এ ধরনের প্রশ্ন দিয়ে প্রশাসন বিশেষ কোনো পছন্দের প্রার্থীকে টিকিয়ে আনার চেষ্টা করেছে এবং একটি বড় অংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ১২ নম্বরের একটি প্রশ্ন লেখা এবং না লেখার মধ্যে বিশাল ব্যবধান রচিত হবে।"
এমন ইতিহাস বহির্ভূত প্রশ্নের প্রতিবাদ জানান নিয়োগ বোর্ডের প্রার্থী গোলাম রব্বানী বুলবুল। তিনি বলেন, "আমি ইতিহাসের ছাত্র এবং ইতিহাস নিয়ে ১৪ বছর পড়াচ্ছি। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ইতিহাস থেকে প্রশ্ন করা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চারটি প্রশ্নের মধ্যে একটি ইতিহাস বহির্ভূত প্রশ্ন করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য না। প্রশ্ন পাওয়ার পর যাচাই করতে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ ও রাবির ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষক, যার ইতিহাসের পাঠদানের ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এছাড়া বিভাগের অন্যান্য শিক্ষককে দেখিয়েছি; তারাও আমাকে নিশ্চিত করেছেন এটা ইতিহাসের প্রশ্ন নয়। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করব।"
অভিযোগ করে সুরুজ উদ্দিন নামের আরেক প্রার্থী বলেন, "ইতিহাসের নিয়োগ বোর্ডে ইতিহাস বহির্ভূত প্রশ্ন আমাদেরকে অন্য কিছুর ইঙ্গিত দেয়। যাদের প্রশাসন নিতে চাইবে, তারাই শুধু এ প্রশ্ন লিখতে পেরেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এমন দ্বিচারিতার প্রতিবাদ জানান তিনি।"
তবে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেরেজ্জামান বলেন, "যেই দুটি প্রশ্ন নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো ইতিহাস বিভাগের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। এখন যদি কেউ প্রশ্নের প্যাটার্ন ধরতে না পারে, সেটা তাদের ব্যর্থতা, এর দায় আমরা নেবো না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, "কৃষি বিপ্লব ইতিহাস বিভাগের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। যারা বহির্ভূত প্রশ্ন বলছেন, তারা ঠিক বলছেন না। ইতিহাস বিভাগের প্রথমে যে সিলেবাস পড়ানো হয়, সেখানে কৃষি বিপ্লব ইতিহাস নিয়ে পড়ানো হয় বলে জানান তিনি।"
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
Comments