Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বাধীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজ নিজ আসনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা চান। তাদের যুক্তি—আগাম নিশ্চিততা পেলে তারা মাঠে সংগঠিতভাবে কাজ করতে পারবেন এবং বিএনপির নেতাকর্মীরাও সহযোগিতায় আগ্রহী হবেন।

তবে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া জোট শরিকদের অধিকাংশ এখনো মনোনয়নের নিশ্চয়তা পাননি। বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী অধিকাংশ মিত্র ইতিমধ্যে প্রার্থী তালিকা জমা দিলেও সেগুলো এখনো যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে। দলটি সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) খসড়াও এই প্রক্রিয়ায় বিবেচনায় নিচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়াতেও রয়েছে বিএনপি।

নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “মিত্রদের আসন বণ্টন নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এখন আবার সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী জোট শরিকদের নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। ফলে বিএনপিকে অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি মিত্রদের আসন বণ্টন নিয়েও কাজ চলছে। বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী যুগপতের শরিকরা এখন পর্যন্ত ১০৩ জনের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে।

এর মধ্যে—

১২ দলীয় জোট ২১ জন

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯ জন

গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ১৯ জন

এলডিপি ১৩ জন

গণফোরাম ১৬ জন

এনডিএম ১০ জন

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫ জন

বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬ জন

বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) ৪ জন

এই তালিকা এখন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে রয়েছে। তিনি যাচাই-বাছাই করছেন প্রতিটি প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, নির্বাচনী অবস্থান, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সম্ভাব্য ফলাফলের বিশ্লেষণ দেখে।

বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে সদ্য অনুমোদিত সংশোধিত আরপিওর সেই ধারা, যেখানে বলা হয়েছে—“নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে অংশ নিতে হবে।” বিএনপি বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য শিগগির নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) বিএনপি মিত্রদের জন্য ৫৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে তৎকালীন ২০ দলীয় জোটকে ৪০টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন দেওয়া হয়। নিবন্ধন না থাকায় তখন জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীরা বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকেই নির্বাচন করেছিলেন।

তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। আওয়ামী লীগ কার্যত মাঠে না থাকায় জামায়াতকেই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দুটি দলই পৃথক নির্বাচনী জোট গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছে।


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার বিএনপি শরিকদের জন্য প্রাথমিকভাবে পঞ্চাশের মতো আসন ছাড়তে পারে। তবে জোটের পরিধি বড় হলে সংখ্যাও বাড়তে পারে। যেসব মিত্র দলের প্রার্থী সংশ্লিষ্ট এলাকায় শক্ত অবস্থানে আছেন, তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

তবে জোট নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্র থেকে এখনো স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কাছে মিত্রদের প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ না যাওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে একধরনের অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “বিএনপি মিত্রদের মধ্যে যাদের আসন ছাড় দিতে চায়, সেসব আসনে যত দ্রুত সম্ভব জোটের প্রার্থী ঘোষণা করলে মাঠে কাজ শুরু করা সহজ হবে। এতে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও কর্মীদের সমন্বয় জোরদার করা সম্ভব।”


সব মিলিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মিত্রদের আসন বণ্টনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায় বিএনপি। কারণ, সময় যত গড়াচ্ছে, মাঠ পর্যায়ে তত বাড়ছে চাপ ও প্রত্যাশা—বিশেষ করে যারা যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন, তারা এখন জানতে চান, “কে আসলে কোন আসনে লড়বেন?”