Image description

খাবার পানিকে বিশুদ্ধ করতে কিছু দিন আগেও পানির ‘ফিল্টার’ বেশ জনপ্রিয় ছিল । তবে কালের পরিক্রমায় পাথর, লাইমস্টোন পাউডার, সিমেন্ট, বালু আর মোজাইক মিশ্রণ দিয়ে তিন স্তরবিশিষ্ট ফিল্টারের চাহিদা কমে গেছে। তাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে বিদেশে পরিচিতি পাওয়া এ শিল্প-কারখানাগুলো। 
বর্তমানে প্লাস্টিক, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ফিল্টারে বাজারে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় ফিল্টার শিল্পের অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে বিলুপ্তির প্রায় হবিগঞ্জের মাধবপুরের জনপ্রিয় হাতে তৈরি ফিল্টার শিল্প।
জানা যায়, এক সময় মাধবপুর ছিল হাতে তৈরি ফিল্টারের জন্য দেশ-বিদেশ পরিচিত। এখানকার কারিগরদের বানানো পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ হতো, রপ্তানি হতো বিদেশেও। সেই সময় মাধবপুর পৌরসভার কাছারি এলাকার ও আশপাশে ১৫ থেকে ১৭টি ফিল্টার কারখানা চালু ছিল। যেখানে প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন। সিমেন্ট, বালি, কংক্রিট ও মোজাইক মিশিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এসব ফিল্টার পানি বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি ঠান্ডা রাখার ক্ষমতাও রাখত। দেশীয় কারিগরি দক্ষতায় তৈরি হওয়ায় ‘মাধবপুর ফিল্টার’ নামে এটি দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। প্লাস্টিক, ফাইবার ও স্টিল বডির আধুনিক ফিল্টারগুলো বাজার দখল করে নেওয়ায় সেই সঙ্গে কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, যা হাতে তৈরি ফিল্টারের কারিগরদের টিকে থাকাকে কঠিন করে তুলেছে। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি কারখানায় কিছু কারিগর এখনও পুরোনো ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে যন্ত্রপাতির অভাব, আধুনিক নকশা এবং বাজার প্রতিযোগিতার চাপে তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কারিগর বাবু সুরঞ্জন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা বাবার আমল থেকে ফিল্টার বানাচ্ছি। আগে প্রতিদিন অর্ডার সামলাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন সপ্তাহেও একটা অর্ডার পাই না। অনেকে কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।’
মাধবপুর বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী সাদেক মিয়া বলেন, ‘একসময় এখানকার ফিল্টার সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুরসহ দেশের নানা জেলায় যেত। এখন শুধু স্থানীয়ভাবে অল্প কিছু বিক্রি হয়, সেই রমরমা দিন আর নেই।’
কারিগররা জানান, সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা দেওয়া গেলে এই শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, ‘হাতে তৈরি ফিল্টার এক সময় মাধবপুরের একটি ব্র্যান্ড ছিল। সময়ের পরিবর্তনে এই শিল্প পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা দেওয়া গেলে পুরোনো এই ঐতিহ্য আবারও ফিরে আসতে পারে।’