Image description

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এক দুরূহ চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আসিফ নজরুল বলেন, "২৭০ দিন ধরে আলাপ-আলোচনা করে আমরা প্রধান রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের মধ্যে যে অনৈক্যের সুর দেখছি, এটা হতাশাব্যঞ্জক।" তিনি জানান, এই তীব্র বিরোধের মধ্যে কীভাবে সমঝোতার দলিল পাস হয়, তা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ।

আইন উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, কিছু ভাইটাল প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর আসলে ঐকমত্য হয়নি। এর আগে বিষয়বস্তু নিয়ে বিরোধের কথা জানা গেলেও, এখন দেখা যাচ্ছে দুটি নতুন বিরোধ সামনে এসেছে: কী পদ্ধতিতে সনদ পাস করা হবে এবং গণভোট কবে হবে। তিনি বলেন, "এত দৃঢ়, পরস্পরবিরোধী এবং উত্তেজিত ভূমিকা নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল। আপনারা যদি এ রকম একটা ভূমিকা নেন, তাহলে সরকার কী করবে? আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না, এতদিন আলোচনার পর আপনাদের যদি ঐকমত্য না আসে, তাহলে আমরা সত্যি কী করবো, এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে।"

আসিফ নজরুল বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি এককভাবে সরকারকে আল্টিমেটাম বা চাপ সৃষ্টি করে, তার মানে হলো তাদের মধ্যে ঐকমত্য নেই। তারা চাচ্ছেন, যেন সরকার তাদের দলীয় অবস্থান সমর্থন করে। তিনি এটিকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, "আলোচনার জন্য তাদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। তারা যে অনৈক্য দেখাচ্ছেন, জুলাইয়ের চেতনাকে কোথায় নিয়ে গেছেন, বিবেচনা করা উচিত।"

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ক্যাবিনেটের মিটিংয়ে অনৈক্যের বিষয়টি নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন দুটি বিকল্প দিয়েছে:
১. একটি হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, গণভোট এবং ২৭০ দিনের মধ্যে যদি তা না হয় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে। এই পদ্ধতির কোনো নজির আছে কিনা বা আদৌ সম্ভব কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
২. আরেকটি হলো, এই দায়-দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া।

এই দুই বিকল্পের মধ্যে কোনটি বেশি গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, "গণভোট নিয়ে বিরোধ তো তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এসব বিষয়ে আমাদের একটা সময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা তাকে সহায়তা করার জন্য থাকবো।" তিনি আরও বলেন, "সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট কেউ নেবে না, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকেন। এই সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা নেবেন। আমাদের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন হলে তিনি করবেন এবং আমরা যে সিদ্ধান্ত নেবো সেখানে আমরা দৃঢ় থাকবো। আর সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত নেওয়া হবে।"