বিএনপির জন্য ‘সেক্রেফাইস’ করেছি, এখন নির্বাচনের আগে গণভোট চাই: তাহের
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির বিরোধিতা মেনে অনেক বিষয়ে ‘সেক্রেফাইস’ করেছেন দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, এখন তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের নিশ্চয়তা চান। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অনতিবিলম্বে’ আদেশ জারির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তাহের বলেন, “আপনারা জানেন যে বিএনপি প্রথমে তো কোনো সংস্কারই চাচ্ছিল না। এরপর জনগণের চাপে তারা সংস্কার কমিশনে অংশগ্রহণ করেছে।” বিএনপিকে কয়েকবার ধন্যবাদ দিয়ে তিনি যোগ করেন, “বিএনপিকে জায়গা করে দিতে আমরা অনেক ‘সেক্রেফাইস’ করেছি। অনেক ‘পয়েন্ট মাইনাস’ করেছি।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যেমন এনসিসির প্রস্তাব ছিল, জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ করা। এখানে পিএসসিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য সাংবিধানিক ‘বডি’ খুলে দেওয়া। চাকরির নিয়োগ বা ইলেকশন কমিশনে যেন প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের দল কোনোরকম প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। বিএনপি এটার বহু বিরোধিতা করেছে। কেন করেছে- আল্লাহই ভালো জানেন।”
গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা থাকলেও রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ সম্বলিত রাজনৈতিক দলিলটি গেল ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দিয়েছে। সেখানে জাতীয় নির্বাচনের দিন বা তার আগে যে কোনো সময় গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে এক দিনে গণভোট চায়। অন্যদিকে জামায়াত নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের দাবি জানিয়ে আসছে। তাহের বলেন, “আমরা আলোচনার সুবিধার্থে, আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ‘সেক্রেফাইস’ করেছি। নাম পরিবর্তন তারা চাইছে, আমরা মেনে নিয়েছি বিএনপিকে সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমরা বেশি বললে, উনারা আবার উঠে চলে যেতে চায়। তাদের যেহেতু দরকার, তাই আমরা সেক্রেফাইস করেছি।”
বিএনপির মনোভাব নিয়ে তিনি বলেন, “তারা কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তারা কোথায় ক্ষতি হচ্ছে, তাদের জন্য কোনটা উপযোগী সেই হিসাব করে তারা একটা সংস্কার চাচ্ছে।” এছাড়া প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান একজনই না হওয়া, ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকার সুযোগ না রাখার বিষয়েও বিএনপির বিরোধিতা ছিল বলে জানান তাহের। এসব ‘বিএনপির বিপক্ষে না, দেশের জন্য’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো তো তাদের দলের বেলায় প্রযোজ্য, তারপরও বিরোধিতা করেছে।
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ আমলে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অনতিবিলম্বে’ আদেশ জারি, গণভোটের ঘোষণা এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান জামায়াত নেতা। সুপারিশমালায় সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপির প্রবল মতবিরোধ রয়েছে।
তাহের স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন চাই। আমরা যে সংস্কার কমিশন যে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে এটার আমরা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। এটা বাস্তবায়নের লক্ষে গণভোটের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে- দুটি প্রস্তাব। একটি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট। আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দিন একসাথে গণভোট।”
“আমরা প্রথম প্রস্তাবটি অত্যন্ত জোরালোভাবে সমর্থন করি। এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট হবে, আমরা এর নিশ্চয়তা চাই। এটাই আমাদের সুস্পষ্ট দাবি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা জুলাই চার্টারের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই আইনগত ভিত্তির মাধ্যমে। যে সুপারিশ করা হয়েছে একটা আদেশের মাধ্যমে, সে আদেশের মাধ্যমে। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চাই। গণভোটের রায় নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন চাই। এটা খুব পরিষ্কার।”
সময়ের সংকট তুলে ধরে তাহের বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সংস্কারের ওপর আমরা যে গণভোট চাচ্ছি, তার জন্য সময় অত্যন্ত কম। প্রতিটা ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ। (ঐকমত্য কমিশন) যে প্রস্তাব দিয়েছে, ইতোমধ্যে চারদিন পার হয়ে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম, এ প্রস্তাবের পরের দিন একটা আদেশ জারি করবেন এবং গণভোটের প্রস্তুতি নেবেন, কিন্তু সরকার তা নেয়নি। সরকারের কোনো দূরভিসন্ধি আছে কিনা, বুঝতেছি না।”
‘সময়ক্ষেপন না করে’ অনতিবিলম্বে আদেশ জারির অনুরোধ করে তিনি বলেন, অন্যথায় জনগণের ‘আস্থা হারাবেন’ প্রধান উপদেষ্টা। “আজকের মধ্যে হলে উত্তম। রাত একটা-দুইটায়ও আদেশ জারির নজির আছে। আর আজকে না হলেও কাল অবশ্যই আদেশ জারি করেন। এ নিয়ে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নাই।”




Comments