আজ ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। জাতির ইতিহাসে একটি বেদনাবিধুর দিন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর, রাতের আঁধারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।
এই নির্মম ঘটনার ঠিক আগে একই বছরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ এই চার সহকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ষড়যন্ত্র, ক্ষমতার পাল্টাপাল্টি দখলের ধারাবাহিকতায় রাতের আঁধারে কারাগারে বন্দী অবস্থায় ৪৯ বছর আগে হত্যা করা হয় জাতীয় এই চার নেতাকে।
টালমাটাল এবং উত্তেজনাকর এক পরিস্থিতিতে ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে কারাগারের সামনে একটি পিকআপে করে আসে কয়েকজন। সেসময়ের রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদ ফোন করে নির্দেশ দেন সেনা সদস্যরা যা করতে চায় তাদের যেন তা করতে দেওয়া হয়। রাত ৩টার পর তখনকার জেলার আমিনুর রহমানের কাছে জাতীয় চারনেতাকে একত্রিত করার নির্দেশ আসে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দিন আহমদ যে সেলে ছিলেন সে কক্ষে মনসুর আলী এবং কামরুজ্জামানকে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলা জেলহত্যা মামলা নামে পরিচিতি পায়।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৮। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিনজন। সাজাপ্রাপ্ত এই ১১ আসামির মধ্যে ১০ জনই ধরাছোঁয়ার বাইরে।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাতেও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দেশে ফেরার পর ২০২০ সালের এপ্রিলে তিনি ধরা পড়েন এবং ওই মাসেই তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত থেমে ছিল ২১ বছর। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গত বছরের মতো এবারও জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি নেই।




Comments