চট্টগ্রাম অঞ্চলে পান-সুপারির ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের সাথে জড়িত। বাঙালির চায়ের অভ্যাসের মতো পান-সুপারি খাওয়ার রেওয়াজও প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। অতিথি আপ্যায়ন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক রীতিতে পান-সুপারি অপরিহার্য। এটি শুধু ফল নয়, বাংলার সংস্কৃতির অন্তর্গত উপাদান।
প্রাচীনকালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বণিকদের বড় আকারে সুপারি বাণিজ্য ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের রামুতে হাজার হাজার কৃষক ও ব্যবসায়ী এ ব্যবসার সাথে জড়িত। সুপারি উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে। বেকার যুবকরাও এতে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এবং ভাগ্য পরিবর্তন করছেন।
অক্টোবর থেকে সুপারি পরিপক্ক হতে শুরু করে এবং বেচাকেনা জমে ওঠে। কক্সবাজার জেলায় মৌসুমী সুপারির হাট বসেছে। রামুর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দুই হাজার মৌসুমী ব্যবসায়ী ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলার অন্যতম বাজার হিসেবে রামুর ঐতিহ্যবাহী ফকিরা বাজারে সুপারি কেনাবেচা হয়।
বাজার ইজারাদার আব্দুস সালাম জানান, তিন-চারশ বছর ধরে তার পূর্বপুরুষরা এখানে সুপারি ব্যবসা করতেন। ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ফকিরা বাজারে বিশাল সুপারি হাট বসে। আগামী মার্চ পর্যন্ত পাকা সুপারি বিক্রি চলবে, এরপর শুকনো ও ভেজা সুপারি বাজারে আসবে।
তিনি আরও জানান, সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চাষি ও ব্যবসায়ীরা সুপারি কেনাবেচা করেন। রামুর সুপারি মরিচ্যা, ঈদগাহ, চকরিয়া, মহেশখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালীসহ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের ১০-১৫টি জেলায় যায়।
ব্যবসায়ী খায়রুল ও সাত্তার জানান, আকারে বড়, স্বাদে ও মানে সমৃদ্ধ হওয়ায় রামুর সুপারির সারা দেশে সুনাম রয়েছে। তারা চাষিদের কাছ থেকে কিনে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন গত বছরের চেয়ে ভালো হয়েছে। চাহিদা বেশি থাকায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
দামের বিষয়ে তারা জানান, প্রতি পোন (৮০টি) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং প্রতি কন (১২৮০টি) সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে দাম আরও বাড়ে।
রামু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা রহমান জানান, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য উপযোগী। প্রতি ঘরে সুপারি বাগান রয়েছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে শত শত একর জমিতে বাগান গড়েছেন। লাভের আশায় নতুন করে অনেকে চাষ ও ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে প্রায় ৮ হাজার চাষি ও ব্যবসায়ী সুপারির সাথে জড়িত। চলতি মৌসুমে ৩০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সুপারি উৎপাদন হয়েছে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন আড়তে সুপারি যায়। প্রক্রিয়াজাত করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশেও রপ্তানি হয়। দেশে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়, যার ২৬ শতাংশের বেশি দক্ষিণাঞ্চলে।




Comments