Image description

রাজশাহীর চারঘাটে নেপিয়ার ঘাস চাষের আগ্রহ বাড়ছে গরু খামারি ও কৃষকদের। তাই এ ঘাস জমি ও রাস্তার ধারে চাষ করছে চাষিরা। জমিতে চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে এবং সড়কের ধারে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে বাড়তি আয় করেছেন তারা। 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ভারত থেকে নেপিয়ার ঘাস নিয়ে আসা হয়। পরে সেটি স্থানীয়ভাবে চাষাবাদের উপযোগী করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে এ ঘাসের চাষ ছড়াতে থাকে দেশে। নেপিয়ার ঘাসের চারা একবার জমিতে লাগালে তিন বছরের মধ্যে নতুন করে লাগানোর প্রয়োজন হয় না। নেপিয়ার ঘাসে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত ও পুষ্টিগুণ। গবাদি পশুর প্রিয় খাদ্য হিসেবে এ ঘাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা ভাটপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি ১ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছেন। তার বাড়িতে নিজের গরু থাকায় এখন আর তাকে বাজার থেকে ঘাস কিনতে হয় না, বরং বাড়ির গরুর খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ঘাস তিনি বাজারে বিক্রি করেন। লাভের অংক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে সারা বছরের খরচ বাদ দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়।’

উপজেলার সরদহ ইউনিয়নের খোর্দ্দগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আকবর আলী বলেন, ‘নেপিয়ার ঘাস লাগানোর ৩ মাস পর কাটার উপযোগী হয়। প্রতি তিন সপ্তাহ পর পর ঘাস কাটা যায়। প্রথম বছর ফলন কিছুটা কম হয় কিন্তু পরবর্তী ২-৩ বছরে ফলন বেড়ে যায়। বছরে সাধারণত ৫-৭ বার ঘাস কাটা যায়। গড়ে প্রতি বিঘায় বছরে ১০ মেট্রিক টন কাঁচা ঘাস পাওয়া সম্ভব।’

উপজেলার হলিদাগাছী গ্রামের সবুর আলী  বলেন, ‘গবাদিপশুর জন্য নেপিয়ার ঘাস খুবই পুষ্টিকর খাবার। এ ঘাস খাওয়ালে অল্প দিনের মধ্যে গরু মোটাতাজা হয় এবং অধিক দুধ পাওয়া যায়।’

উপজেলার মুংলী এলাকার কয়েকজন খামারির সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘ অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি গরুকে দিনে অনেক বেশি নেপিয়ার ঘাস খাওয়াতে হয় এবং এই ঘাস খাওয়ার পর গরুর উজ্জ্বলতা ও গঠন ভালো হয় বলে তারা জানান।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, নেপিয়ার ঘাস বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এ ঘাস একবার চাষ করার পর কয়েক বছর ধরে ফলন পাওয়া যায়। এ ঘাস সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। তবে বেলে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন সবচেয়ে বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ আল মামুন হাসান বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। এ ঘাস ৪ ফুট থেকে সাড়ে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সরকার এনায়েত কবির বলেন, ‘উপজেলায় প্রায় ৫০০ গরু খামার রয়েছে এবং ঐসব খামারিরা নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। নেপিয়ার ঘাস গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। তাই খামারিরা গোখাদ্য হিসেবে নেপিয়ার ঘাস ব্যবহার করছেন।’