Image description

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও আওয়ামী লীগ আমলে দায়িত্ব পালন করা বহু থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) এখনো বহাল রয়েছেন, যা পুলিশ প্রশাসনে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি করেছে। শুধু এক থানা থেকে আরেক থানায় বদলি করেই লোকদেখানো পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার বাইরে থেকে অনেককে আবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায় নতুন করে পদায়ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিগত সরকার আমলে ওসি পদে বঞ্চিত বিপুলসংখ্যক পরিদর্শক এখনো আগের অবস্থানে রয়েছেন, যা তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

সূত্র জানায়, ডিএমপির বেশ কয়েকজন ওসিকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ তালিকায় কদমতলী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, আদাবর, সবুজবাগ, ওয়ারী, তুরাগ, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, মিরপুর ও তেজগাঁও থানার ওসিদের নাম রয়েছে। ইতোমধ্যেই অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব, কলাবাগান ও পল্লবী থানার ওসিদের পরিবর্তন করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। আমাদেরও একটি সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা তো সবাইকে বাদ দিতে পারব না। প্রথমে দেখব যারা তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন, দ্বিতীয়ত, দুটি এবং তৃতীয়ত, একটি নির্বাচনে কারা দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি চাইলেই তো নতুন ওসি নিয়ে আসতে পারব না। কেউ যদি একটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে থাকে, আর যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকে তাহলে তাকে দায়িত্ব দিতে সমস্যা নেই। চাইলেই তো ১০০ ওসি নিয়োগ দিতে পারব না।” অনেক পুলিশ পরিদর্শক আছেন, যারা ওসি হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য কিন্তু অতীতে কখনো দায়িত্ব পাননি—এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, “ফ্যাসিবাদ আমলের কোনো ওসি ডিএমপিতে কর্মরত আছে কি না তা আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকে যেহেতু বিষয়টি জানলাম। খোঁজ নিয়ে দেখব। এ ধরনের কাউকে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের কাউকে রাখা হবে না।”

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে দায়িত্বে থাকা অনেক ওসি আওয়ামী আমলে গুরুত্বপূর্ণ থানায় ছিলেন। কদমতলীর ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব পূর্বে কুমিল্লার লালমাই ও নাঙ্গলকোট থানার ওসি ছিলেন এবং সাবেক মন্ত্রী আফম মোস্তফা কামালের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ডেমরার ওসি মাহমুদুর রহমান এর আগে চুয়াডাঙ্গা ও ভোলায় দায়িত্ব পালন করেন। যাত্রাবাড়ীর ওসি কামরুজ্জামান কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ছিলেন। কামরাঙ্গীরচরের ওসি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে এলাকায় একাধিক বাড়ির মালিকানার অভিযোগ রয়েছে। তুরাগ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, আদাবরের এসএম জাকারিয়া, সবুজবাগের মো. ইয়াসিন, মিরপুরের সাজ্জাদ রোমান, মোহাম্মদপুরের রফিক আহমেদসহ অনেকেই আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ থানায় দায়িত্বে ছিলেন।

অন্যদিকে, থানায় ওসির দায়িত্ব না পেয়ে কয়েকশ ইন্সপেক্টরের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেক যোগ্য কর্মকর্তা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও ওসি পদে পদায়ন পাননি। বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনও এখন দুই ভাগে বিভক্ত।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. সরওয়ার বলেন, “ফ্যাসিবাদ আমলে ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী যেসব কর্মকর্তা ডিএমপিতে ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা থাকার পরও অতীতে যারা দায়িত্ব পাননি, ভবিষ্যতে তাদের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।”